রাঙামাটি । শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ , ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১৭:১২, ২২ নভেম্বর ২০২০

তিনটি সেতু ও স্বাধীনতা চত্বরের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

তিনটি সেতু ও স্বাধীনতা চত্বরের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণে মাগুরা, নারায়ণগঞ্জ ও যশোরে তিনটি সড়ক সেতু এবং পাবনায় একটি স্বাধীনতা চত্বরের উদ্বোধন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী রোববার সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নবনির্মিত প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন করেন।

সেতু উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই তিনটি সেতু মহম্মদপুর, রূপগঞ্জ এবং অভয়নগরবাসীর জন্য মুজিববর্ষের উপহার।

প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলো হচ্ছে- মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলাধীন মধুমতি নদীর উপর এলাংখালী ঘাটে ৬০০ দশমিক ৭০ মিটার দীর্ঘ শেখ হাসিনা সেতু, নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া ফেরিঘাট রাস্তায় শীতলক্ষ্যা নদীর উপর ১০০০০ মিটার চেইনেজে ৫৭৬ দশমিক ২১৪ মিটার দীর্ঘ বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) সেতু এবং যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের যশোর-খুলনা সড়কের ভাঙ্গাগেট (বাদামতলা) হতে আমতলা জিসি ভায়া মরিচা, নাউলী বাজার সড়কে ভৈরব নদীর উপর ৭০২ দশমিক ৫৫ মিটার দীর্ঘ সেতু।

এছাড়া উত্তরবেঙ্গের প্রবেশদ্বার পাবনায় ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম বকুল স্বাধীনতা চত্বর’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে গণভবনের সঙ্গে সচিবালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, মাগুরা, নারায়ণগঞ্জ ও যশোরের ডিসি কার্যালয় এবং পাবনার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম বকুল স্বাধীনতা চত্বর সংযুক্ত ছিল।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলাল উদ্দিন, পাবনা প্রান্ত থেকে স্বাধীনতা চত্বর বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক এবং স্কয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী বক্তৃতা করেন।

এলজিআরডি ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টচার্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রান্তে এবং নারায়ণগঞ্জ প্রান্তে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীসহ স্থানীয় এমপি, গণ্যমান্য ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি এবং জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং উপকারভোগী জনগণ নিজ নিজ প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।

গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। এতে নবনির্মিত তিনটি সেতু এবং ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম বকুল স্বাধীনতা চত্বর’ এর ওপর দুটি পৃথক ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।

টুঙ্গিপাড়া ছুঁয়ে যাওয়া মধুমতি নদীর উজানে তীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে শতাব্দী প্রাচীন জনপদ মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা। পাশ্ববর্তী গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও রাজবাড়ি জেলা এবং রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগে বড় বাধা মধুমতি নদীর উপর নির্মিত হয়েছে ৬শ’ মিটার দীর্ঘ ‘শেখ হাসিনা সেতু’। নবনির্মিত সেতুটি মাগুরার মহম্মদপুরের সঙ্গে পূর্বদিকে পদ্মাসেতু সংযুক্ত করবে। ফলে মহম্মদপুর উপজেলা এবং ঢাকার মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৯৮ কিলোমিটার কমে আসবে।

ঢাকার পাশ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ জেলার উপজেলা রূপগঞ্জের বুক চিরে বয়ে যাওয়া শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড়ে রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদসহ চারটি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার অবস্থান। পশ্চিমপাড়ে তিনটি ইউনিয়ন, রূপগঞ্জ পুলিশ স্টেশন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ রয়েছে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কার্যালয়। ফলে স্থানীয় জনসাধারণকে নদী পার হয়ে যাতায়াত করতে হতো। এরই প্রেক্ষাপটে শীতলক্ষ্যা নদীর উপর বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক সেতু নির্মিত হয়েছে। 

এই সেতুটি ঢাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার কমিয়ে আনবে। রূপগঞ্জের জামদানির জন্য বিখ্যাত তারাবোর দূরত্ব কমিয়ে আনবে রাজধানীর সঙ্গে।

যশোরের অভয়নগর উপজেলাকে ভৈরব নদী দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। নদীর উভয় পাড়ে উপজেলার ৪টি করে ইউনিয়ন অবস্থিত। কাজেই বিভিন্ন কাজে উপজেলাবাসীকে নদী পার হওয়ার বিড়ম্বনায় পড়তে হতো। যে কারণে ভৈরব নদীর উপর ৭০২ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুটি নির্মাণের ফলে নড়াইল জেলার সঙ্গে অভয়নগরের দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার হ্রাস পেয়েছে। এই সেতু নির্মাণের ফলে যশোরের অভয়নগর উপজেলা ভাটিয়াপাড়া হয়ে গোপালগঞ্জ এবং পদ্মাসেতুর সঙ্গে সংযুক্ত হল। এই সেতুটি ভৈরব নদী বন্দরের কার্যক্রম নদীর পূর্ব পাড়ে সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি করেছে।

অনেক বরেণ্য রাজনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তির স্মৃতিতে ধন্য পাবনা টাউন হল চত্বর। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, জাতির পিতার সহচর ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা এবং মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীরও স্মৃতি রয়েছে। আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখানে ১০ থেকে ১২ বার সভা-সমাবেশ করেছেন।

উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে পাবনা টাউন হল প্রতিষ্ঠা হলেও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে মুজিব বাহিনীর অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল মুক্তমঞ্চ নাম দেয় কতৃর্পক্ষ। পরে নতুন আঙ্গিকে নির্মিত চত্বরেরও নামকরণ করা হয়েছে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল স্বাধীনতা চত্বর।’

স্থানীয় শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, মুক্তিযোদ্ধা ও জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষের উদ্যোগে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে স্বাধীনতা চত্বরের নির্মাণকাজ চলতি বছরের মার্চ মাসে শেষ হয়। এটি নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার মধ্যে দিয়ে নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশ ঘটাবে বলে উদ্যোক্তারা আশা করছেন।

এখানে প্রতিটি ইট-পাথরের নকশায় মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস বিদ্যমান। স্বাধীনতা চত্বরের প্রধান মঞ্চের দৈর্ঘ্য ৪৬ ফুট ও প্রস্থ ৪০ ফুট এবং উচ্চতা ২০ ফুট। যার দুই পাশে দুটি গ্রীন রুম এবং টয়লেটসহ ওয়াশরুম রয়েছে। যার দৈর্ঘ্য ১৮ ফুট ও প্রস্থ ২৪ ফুট। মাঠের দৈর্ঘ্য ১১৮ ফুট ও প্রস্থ ১১৭ ফুট। যার তিনদিকে দুই স্তরের বসার গ্যালারি রয়েছে। মাঠের উত্তর-পূর্ব কর্নারে প্রবেশের প্রধান ফটক ও দক্ষিণ ও পূর্ব কর্নারে ছোট একটি গেট রয়েছে। এছাড়া সর্বোপরি পুরো মাঠে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন সবুজ ঘাস।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নেই সারাদেশের মধ্যে পাবনা প্রথম হানাদার মুক্ত হয় এবং এখানেই এ জেলার প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা হয়।

আলোকিত রাঙামাটি