রাঙামাটি । শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ , ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নুসরাত জাহান

প্রকাশিত: ১৬:৩০, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯

থার্টিফাস্ট নাইট : নতুন বছরের সূচনা হোক পাপ ও অশ্লীলতামুক্ত

থার্টিফাস্ট নাইট : নতুন বছরের সূচনা হোক পাপ ও অশ্লীলতামুক্ত

ফাইল ফটো


দিন যায় রাত আসে, দিন-রাত্তির পালাবদলে চলে সপ্তাহ, মাস এমনকী বছর। ষড়ঋতুর এই রূপের শ্যামলিমায় চাইলেও কেউ পৌষে নতুন কুড়ির জন্ম দিতে পারে না গাছে গাছে, বসন্তে যেমন পারে না কচি পাতার মিছিলে বাধ সাধতে। 

যে অদৃশ্য শক্তিবলে প্রকৃতির সময় গড়িয়ে যায়, সে একই শক্তিবলে মানুষেরও। সে শক্তি কার? ক্লিন্টন, ওবামা, বাদশাহ সালমান? সবাই জানি সে শক্তি শুধু একজনেরই। তা শুধু মুসলমানের জন্য নয়। শুধু মুসলমানরাই স্বীকার করে না। সকল ধর্মাবলম্বীরাই স্বীকার করে, সে শক্তি শুধুই সৃষ্টিকর্তার। 

শুধু প্রত্যেকের বুঝার এবং ভাববার দৃষ্টিকোণটা আলাদা। কেউ সঠিক পথে তাকে ডাকেন, কেউ বেঠিক পথে। সকল শক্তির মালিক তিনি সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন।

পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, তোমরা কীভাবে আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করছ, তোমরা নিষ্প্রাণ ছিলে, অতঃপর তার দয়ায় তোমরা প্রাণ পেয়েছ। তিনিই তোমাদের মৃত্যু দান করবেন আবারো জীবনদান করবেন। (সূরা বাক্বারা: ২৮)।

আল্লাহ তায়ালার একমাত্র মনোনীত ধর্ম হলো ইসলাম। মুসলমানের জন্য ইসলাম হলো পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। স্বভাবতই আমরা সমাজে চলতে গেলে কারো কাছ থেকে কোনো সুবিধা পেলে ধন্যবাদ দিই। বারবার দিই। অথচ আমরা তো প্রতি নিঃশ্বাসে একবার করে জীবন ফিরে পাই, আল্লাহকে কতবার ধন্যবাদ দিই। তাতেও সমস্যা নেই, তবে তার কথাতো শুনতে পারি? পারছি কী? কতটা পারছি?

বর্বর আদিম যুগ থেকে আজ আমরা অত্যাধুনিক যুগের বাসিন্দা হয়েছি। যুগে যুগে প্রকৃতিগত, সংস্কৃতিগত, জাতিগত নানা পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু আল্লাহর বিধান, আল্লাহর হুকুম-আহকাম, সেখানে কী পরিবর্তন এসেছে? সময়ের ব্যবধানে, বিভিন্ন নবী ও রাসূলের আবির্ভাবের ফলে পরিবেশ পরিস্থিতির অনুকূলে নবী ও রাসূলদের ওপর যে রকম হুকুম তামিল হয়েছে সময় ভেদে মুসলমানদের ধর্মীয় সংস্কৃতিতে সামান্যতম বাহ্যিক পরিবর্তন হয়তো দেখা যাবে কিন্তু উদ্দেশ্য? উদ্দেশ্য তো একই। ইসলাম সবসময় মুসলিম এবং গোটা সৃষ্টিজগতের কল্যাণের জন্যই।
 
এ সময়ের বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ আখেরী নবীর অনুসারি ও অনুগামী। সে অনুযায়ী আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ আসমামি কিতাব পবিত্র কোরআন শরিফ এবং আখেরি নবীর (সা.) এর হাদিস আমাদের সামগ্রিক জীবনের একমাত্র দিকনিদের্শনা। কালক্রমে আমরা ইসলামের সংস্কৃতি থেকে বিচ্যুত হতে হতে সর্বনাশের দিকে এগুচ্ছি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনাচরণ, ভাবনা, কর্ম, উৎসব সবকিছুতেই রয়েছে বহুজাতিক সংমিশ্রণ অথচ আমরা তো নিজেদের মুসলিম জাতি হিসেবেই দাবি করি।
 
আসন্ন থার্টিফাস্ট নাইট। বাঙালির জীবনে একসময় এ উৎসবের কোনো গন্ধও ছিল না। আজ তা না করলে অসভ্য খ্যাত হতে হয়। সভ্য বাঙালিরা তো জানেন থার্টিফাস্ট নাইট বাঙালিদের সংস্কৃতি না।

যেভাবে হলো ইংরেজি নববর্ষ ও থার্টিফাস্ট নাইট:

খ্রিষ্টপূর্ব ‘৪৬ সালে ইংরেজি নববর্ষের প্রচলন প্রথম শুরু হয়। রোম সেনাপতি ও একজন একনায়ক রাষ্ট্রপ্রধান জুলিয়াস সিজার এর প্রচলন শুরু করেন। ইসলামের ইতিহাস ঘাটলে ১ জানুয়ারি নববর্ষ পালনের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্কের প্রমাণ মেলেনি। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার থেকে প্রথমে উৎপত্তি লাভ করে ইংরেজি সাল। পরে তা সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। 

খ্রিস্টানদের একজন তথাকথিত ধর্মযাজক গ্রেগরিয়ানের নামানুসারে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের নামকরণ করা হয়। জানা যায়, তার বিবাহ বহির্ভূত একটি সন্তানও রয়েছে। তার নামানুসারে আবিস্কৃত ক্যালেন্ডার থেকে উদ্ভূত ইংরেজি নববর্ষ প্রথমে রোমে শুরু হলেও নওরোজ হিসেবে ইরানেও পালন করা শুরু হয়। ধীরে ধীরে ইরান থেকে মুসলিম দেশগুলোতেও তা ছড়িয়ে পড়ে।

পবিত্র কোরআনের সূরা আলে ইমরানের ১০২ নম্বর আয়াতে স্পষ্ট বলা আছে, ‘হে মুমিনগণ তোমরা আল্লাহকে যথাযথ ভয় করো। আর তোমরা মুসলমান না হওয়া পর্যন্ত মারা যেও না।’ থার্টি ফাস্ট নাইটের যে সংস্কৃতি তা ইসলাম কখনো অনুমতি দেয় না। মদ খাওয়া, অর্ধনগ্ন নারী নিয়ে ফূর্তি করা, বাজি ফাটানো, নাচ করা। ইসলাম কখনো এগুলোকে সমর্থন করে না। একজন মুসলমান যদি আল্লাহকে ভয় করে তবে সে কখনোই এই কাজগুলো করতে পারে না। তারপরও যদি কেউ দাবি করে, সে থার্টিফাস্ট নাইটের পার্টিতে যায়, ইংরেজি নরবর্ষ উদযাপন করে এবং আল্লাহকেও ভয় পায়, তা সম্পূর্ণ ভণ্ডামি। আর ভণ্ডদের ঈমান না থাকাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। যাদের ঈমান থাকবে না তাদের মৃত্যুর পূর্বে নিশ্চয় একবার হলেও ভাববার দরকার আছে। একই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্ট বলেছেন, তোমরা মুসলমান না হয়ে মারা যেও না।

কেউ কেউ হয়তো বলবেন, যাদের সঙ্গে চলাফেরা করি, যাদের সঙ্গে কাজকর্ম করি তাদের নিমন্ত্রণ, আবদার, দাওয়াত রক্ষা না করলে সভ্যতা, সৌজন্য থাকে না, সে কারণে হয়তো পার্টিতে যায়। এ ব্যাপারেও সূরা মায়েদার ১৫৭ নম্বর আয়াতে স্পষ্ট বলা আছে, ‘তোমরা তাদের বন্ধু হিসেবে গণ্য করো না যারা তোমার দ্বীন/ধর্মকে উপহাস করে, তাদের মধ্য থেকে তোমাদের পূর্বে যাদের কিতাব দেয়া হয়েছে ও কাফিরদের। তোমরা যদি মুমিন হও তবে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর।’ এর চেয়ে স্পষ্ট আর কী প্রমাণ দরকার আছে।

ইংরেজি নববর্ষের সংস্কৃতি কিংবা থার্টিফাস্ট নাইট ইসলামের ইতিহাসে অন্তত আখেরি নবীর কোনো খাস উম্মাহ্ কিংবা উম্মত পালন করেননি, কোনো মাজহাবের ইমাম করেননি, কোনো খলিফা করেননি, নবী-রাসূল তো নয়ই। আমরা যাদের ইসলামের আইডল মনে করি, যাদের আদর্শ এবং দেখিয়ে যাওয়া পথ ও মতকে অনুসরণ করে থাকি তাদের কেউ যদি এ সংস্কৃতি পালন কিংবা সমর্থন না করে থাকেন তবে আমরা কী মনে করে পালন করছি। 

বন্ধু দাওয়াত দিয়েছে, সহকর্মী দাওয়াত দিয়েছে? কোরআন দ্বারা প্রমাণিত তারা (বিধর্মীরা) তো আমাদের বন্ধুই নয়। তাদের বন্ধু ভাবতেও নিষেধ আছে। তবে কেন আমরা তাদের সংস্কৃতিকে মেনে চলছি। এ যুগে সাধারণ মুসলমানরা বুঝে না বুঝে ইসলাম থেকে অনেক দূরে সরে আছে। আল্লাহ তাদের হেফাজত করুন।

কোরআনের এরকম অসংখ্য আয়াতে বিপথগ্রস্থ মানুষকে সাবধান করা হয়েছে। আমরা যেন বুঝতে পারি, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সেই তওফিক দান করুন। আমীন! 

আলোকিত রাঙামাটি

জনপ্রিয়