রাঙামাটি । শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ , ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ১৮:১৪, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততা

দেশে দেশে নিষিদ্ধ আল-জাজিরা

দেশে দেশে নিষিদ্ধ আল-জাজিরা

আল-জাজিরা’র লোগো। ছবি: সংগৃহীত


কাতারভিত্তিক মিডিয়া নেটওয়ার্ক আল-জাজিরা। বিশ্বজুড়ে এর রয়েছে বিপুলসংখ্যক দর্শক-পাঠক। তবে ১৯৯৬ সালে সম্প্রচার শুরুর পর থেকেই নানা সময় ভুয়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, উস্কানিমূলক, বিতর্কিত ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার করে সমালোচনার মুখে পড়ে সংবাদমাধ্যমটি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে পৃষ্ঠপোষকতা ও মদদ দেয়ার অভিযোগও রয়েছে আল-জাজিরার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন সময়ে এর সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়।

জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেনের সন্ত্রাসবাদী বক্তব্য প্রচারের একমাত্র প্লাটফর্ম ছিল আল জাজিরা। সিরিয়ায় আল-কায়েদা সমর্থিত সংগঠন জাবহাত আল-নুসরা ইতিবাচকভাবে প্রচার পেয়েছে সংবাদমাধ্যমটিতে। মিসরের উগ্র-রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার খবরও প্রকাশ হয়েছে বিভিন্ন সময়।

আল-জাজিরার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশের সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ভুয়া খবর ছড়ানোর অভিযোগ বেশ পুরনো। আরব বসন্তের সময়  মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে বিক্ষোভকারীদের উস্কে দিয়েছিল সংবাদমাধ্যমটি। টিভি নেটওয়ার্কটিতে একসময় ‘শরিয়া ও জীবন’ নামে একটি অনুষ্ঠান নিয়মিত প্রচারিত হত। সেখানে ব্রাদারহুডের আধ্যাত্মিক নেতা ইউসুফ আল-কারাদাবিকে বিতর্কিত সব প্রশ্ন করতেন দর্শকরা। যেমন- আত্মঘাতী বোমা হামলা করার সময় কি একজন ফিলিস্তিনি নারী হিজাব পরতে বাধ্য?

আরব বসন্তের সময় মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রচারের অভিযোগে মিসরে আটক হন আল-জাজিরার বেশ কয়েকজন সংবাদিক। জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদাকে সমর্থনের অভিযোগে ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে স্পেনে আটক হন টেলিভিশন নেটওয়ার্কটির এক সাংবাদিক।

সন্ত্রাসবাদে আর্থিক সহায়তা ও মদদ দিয়ে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অভিযোগে ২০১৭ সালে কাতারের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সাতটি দেশ। এসময় আল জাজিরা টিভি নেটওয়ার্ক বন্ধ করার দাবিও জানায় দেশগুলো।  

বলা হয়, আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার ও আরব দেশগুলোতে সরকার পরিবর্তনের জন্য চ্যানেলটিকে ব্যবহার করছে কাতার সরকার। ২০১২ সালে চ্যানেলটির সাবেক বার্লিন প্রতিনিধি আকথাম সুলিমান বলেছিলেন, সাংবাদিকতার দৃষ্টিভঙ্গিতে নয়, বরং কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্বার্থের ভিত্তিতে গুরুত্বের বিষয় ঠিক করে আল-জাজিরা। এছাড়া সাংবাদিকদের হলুদ সাংবাদিকতায় বাধ্য করা, জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের নির্দেশ এবং অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা ইত্যাদি অভিযোগ এনে মিসরে আল জাজিরার ব্যুরো প্রধান মোহাম্মদ ফাহমিসহ ২২ জন সাংবাদিক পদত্যাগ করেন।

ইরাক যুদ্ধ চলাকালে বিতর্কিত সংবাদ প্রচারের অভিযোগে আল-জাজিরার সাংবাদিকদের বহিষ্কার ও সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়া ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচারের অভিযোগে বিভিন্ন সময় সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া, আলজেরিয়া, সুদান, লিবিয়া ও কুয়েতসহ বেশ কয়েকটি দেশ। 

শুধু আরব দেশ নয়, কেনিয়া ও সোমালিয়ার মতো আফ্রিকার বহু দেশে নিষিদ্ধ হয়েছিল আল জাজিরা। ভারতেও এক সময় নিষিদ্ধ ছিল চ্যানেলটি। আন্দামান দ্বীপ ও জম্মু-কাশ্মীরকে বাদ রেখে ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্র তুলে ধরার অভিযোগে ২০১৫ সালের এপ্রিলে ৫ দিনের জন্য আল-জাজিরা টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধ রাখা হয় দেশটিতে। 

এদিকে, বাংলাদেশের নানা ঘটনা নিয়েও বিভিন্ন সময় মিথ্যা, বানোয়াট ও প্রোপাগান্ডামূলক সংবাদ প্রকাশ করেছে টিভি চ্যানেলটি। বিভিন্ন সময় জামায়াতের মুখপত্র হিসেবে অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে দেখা গেছে। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করা একমাত্র আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমও আল জাজিরা। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছিল এটি। যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের কোনো নেতার ফাঁসির দণ্ড হলে তারা সেটা প্রচার করতো বিরোধী দলীয় ধর্মীয় নেতা হিসেবে। অভিযোগ রয়েছে, জামায়াতের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে বিতর্কিত খবর প্রচার করে তারা। এমনকি যুদ্ধাপরাধী মো. কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায়ের পর ‘বাংলাদেশ পার্টি চিফ টু হ্যাং ফর ওয়ার ক্রাইমস’ শিরোনামে এক সম্প্রচারে ৩০ লাখ মানুষের শহীদ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে মিথ্যাচার করে বলা হয় ইতিহাসবিদদের হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে ৩ থেকে ৫ লাখ মানুষ মারা গেছে। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্ত্বরে নিহতের সংখ্যা নিয়েও গুজব ছড়ায় আল জাজিরা।

আলোকিত রাঙামাটি

জনপ্রিয়