রাঙামাটি । শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ , ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রেকিং

পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ দেখিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব : কাপ্তাইয়ে প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাপার্বত্যাঞ্চলের পরিস্থিতি অবনতি ঘটলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে : বীর বাহাদুর ঊশৈসিং এমপিসাজেকে নিহত ৯ জনের ময়নাতদন্ত শেষে হস্তান্তর, আহত ২ শ্রমিককে ঢাকায় প্রেরণকাপ্তাই হ্রদে ৩ মাসের জন্য মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শুরুকেএনএফ প্রধান নাথান বমের স্ত্রী ‘নিখোঁজ’সাজেকে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯, পরিচয় মিলেছে ২ জনের!তীব্র তাপদাহ: জনগণকে সচেতন করতে প্রচারণায় নেমেছে রাঙামাটি স্বাস্থ্য বিভাগকাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫ ইউনিটের ৪টিই বন্ধ, উৎপাদন কমে ৩০ মেগাওয়াট

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১১:৪৩, ২৮ মার্চ ২০২০

ধূমপায়ীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা কম! জানালো গবেষণা

ধূমপায়ীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা কম! জানালো গবেষণা

ছবি: প্রতীকী


ধূমপানের ফলে কি করোনাভাইরাসের ঝুঁকি বেড়ে যাবে? এমন প্রশ্ন এখন ধূমপায়ীদের মনে। আবার যারা দীর্ঘমেয়াদী ধূমপায়ী তারাও করোনার ঝুঁকি এই বদঅভ্যাসটি হয়ত কমিয়ে ফেলেছেন। যদি তাই হয়, তবে তা সত্যিই আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করবে।

তবে বিজ্ঞানীরা কী বলছেন? তাদের মতে, ধূমপায়ীদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কারণ এতে ফুসফুস নষ্ট হয়ে যায়। আর করোনাভাইরাসও সোজা ফুসফুসে গিয়ে পৌঁছায় ও তা নষ্ট করে দেয়। এই তথ্যটি যদিও পুরনো। তবে এবার চীনের একদল গবেষকরা জানালো ভিন্ন তথ্য।

তাদের মতে, চীনে করোনায় আক্রান্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে যারা ধূমপায়ী ছিলেন তাদের বেশিরভাগই নাকি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে তারা কেউই দীর্ঘমেয়াদী ধূমপায়ী ছিলেন না। এমনকি তাদের শরীরে তেমন কোনো মারাত্মক রোগও ছিল না। গবেষকদের ধারণা, এ কারণেই বোধ হয় তাদের ক্ষেত্রে করোনা মারাত্মক প্রভাব ফেলেনি।

এর আগে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, ধূমপায়ীদের করোনাভাইরাস থেকে মারাত্মক জটিলতা তৈরি হতে পারে। এমনকি তাদের দ্রুত মৃত্যু হতে পারে এই রোগ থেকে। চীনে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে যারা ধূমপায়ী ছিলেন তাদের প্রায় এক-চতুর্থাংশ রোগীর লাইফ সাপোর্টের প্রয়োজন হয়েছিল। পরবর্তীতে তারা মারা যায়। এটি সত্যিই উদ্বেগের বিষয়। 

অন্যদিকে চীনের আরেক গবেষক দলের দাবি, যারা বর্তমানে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন তাদের অনেকেই ধূমপায়ী। এই গবেষণা অনুযায়ী, করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে যাদের কাশি, গলাব্যথা বা জ্বরের মতো হালকা উপসর্গ ছিল তাদের ১১ শতাংশ রোগীই ধূমপায়ী ছিলেন।

উহানের এই বিশেষজ্ঞরা আরো বলেছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ধূমপায়ীদের শরীরে মারাত্মক এই ভাইরাস ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম ছিল। আর এ কারণেই তারা যখন চীন থেকে অনান্য শহরে গিয়েছে তখন এই ভাইরাসটি অন্যান্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে।

একদল বিশেষজ্ঞরা উহানের এই গবেষকদের তথ্যটি ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলে দাবি করেছেন। কারণ ধূমপান ক্যান্সারের কারণ। এটি ফুসফুসের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে এবং ফ্লুর মতো শ্বাস প্রশ্বাসের অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, চীনের ৩০০ মিলিয়ন মানুষ ধূমপান করে অর্থাৎ সেখানকার মোট জনসংখ্যার প্রায় পঞ্চমাংশ এবং বিশ্বের মোট অংশের এক তৃতীয়াংশ।

উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝোংনান হাসপাতালের গবেষকরা জানায়, তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১৪০ জন রোগীর মধ্যে এক দশমিক ৪ শতাংশই ধূমপায়ী ছিলেন। অর্থাৎ সেখানে দু'জন বর্তমান ধূমপায়ী এবং সাতজন পূর্বে ধূমপায়ী ছিলেন। এই নয় রোগীর মধ্যে তিনজনের মধ্যে কম গুরুতর লক্ষণ ছিল। বাকি ছয়জনের মধ্যে অবশ্য গুরুতর লক্ষণ পকাশ পেয়েছিল। 

বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন লেখক ও গবেষকরা বলছেন, ধূমপান এবং করোনভাইরাস সংক্রমণের মধ্যকার সম্পর্ক এখনো পরিষ্কার নয়। কারণ এখনো এ বিষয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, সর্দি-জ্বর ও কাশি এমন লক্ষণযুক্ত রোগীদের মধ্যে মাত্র ১১ দশমিক ৮ শতাংশই বর্তমান ধূমপায়ী ছিলেন। যদিও লাইফ সাপোর্ট নেয়ার পর মৃত্যুবরণ করা রোগীদের হার আরো দ্বিগুণ।

একই সমীক্ষায় আরো জানা গেছে, ৬৭ শতাংশ রোগীর কাশি ছিল যা সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ।  অন্যান্য সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে ক্লান্তি, মাথাব্যথা ছিল। অন্যদিকে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের বেশিরভাগই দীর্ঘমেয়াদি রোগে অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা হার্টের রোগী। 

নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত একটি বড় গবেষণায় পূর্বে সতর্ক করা হয়েছিল, ধূমপায়ীদের মারাত্মক কোভিড-১৯ ঝুঁকি রয়েছে। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের অধীনে এক হাজার করোনা রোগীকে নিয়ে করা গবেষণায় দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ৯১৩ রোগীর মধ্যেই হালকা লক্ষণগুলো ছিল। আর তাদের মধ্যেই ১১ দশমিক ৮ শতাংশ রোগী ছিলেন ধূমপায়ী। 

বিশ্লেষণ অনুসারে, গুরুতর লক্ষণযুক্ত করোনা রোগীর মধ্যে ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ ধূমপায়ী ছিলেন। তবে তাদের সবার মধ্যেই উচ্চ রক্তচাপ, সিওপিডি ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ ছিল। এর থেকে গবেষকদের ধারণা, যেসব ধূমপায়ীরা কম সময় ধরে ধূমপান করছেন এবং শরীরে এসব রোগ নেই তারা মোটামুটি ঝুঁকিমুক্ত। তবে যাদের শরীরে এসব রোগ বাসা বেধেছে এবং দীর্ঘমেয়াদি ধূমপায়ী তাদের ক্ষেত্রে করোনা মারাত্মক ঝুঁকির কারণ।

ইইউর স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল, ধূমপান করোনোভাইরাস সংক্রমণকে আরো জটিল করতে পারে। একই মত প্রকাশ করে ইউরোপীয় সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (ইসিডিসি) জানায়, কোভিড-১৯ এ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ধূমপায়ীরা। মিনেসোটার রচেস্টারের মায়ো ক্লিনিকের প্রফেসর টেলর হেজে বলেছেন, ধূমপায়ী বা ভ্যাপারদেরকে এই রোগ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। 

ইসিডিসির আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধূমপানের ফলে ফুসফুসের উচ্চ স্তরের এসিই২ নামক এনজাইম বেড়ে যায়। এতে করে ফুসফুসে করোনা সংক্রমণ আরো বেড়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা যেসব ওষুধ খেয়ে থাকে এতে করে তাদের ফুসফুসের কোষগুলোতে থাকা এসিই২ এর পরিমাণ বেড়ে যায়। এর থেকেই করোনা সংক্রমণ আরো বেড়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা।

তামাকের ব্যবহার ফুসফুসের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে করে শ্বাসকষ্টজনিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। গ্রীস এবং হার্ভার্ডের দু’জন বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, দীর্ঘমেয়াদি ধূমপানের ফলে যারা এরই মধ্যে ফুসফুস নষ্ট করে ফেলেছে তাদের ক্ষেত্রে করোনা সত্যিই মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

সূত্র: ডেইলিমেইল 

আলোকিত রাঙামাটি

জনপ্রিয়