রাঙামাটি । শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রেকিং

পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ দেখিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব : কাপ্তাইয়ে প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাপার্বত্যাঞ্চলের পরিস্থিতি অবনতি ঘটলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে : বীর বাহাদুর ঊশৈসিং এমপিসাজেকে নিহত ৯ জনের ময়নাতদন্ত শেষে হস্তান্তর, আহত ২ শ্রমিককে ঢাকায় প্রেরণকাপ্তাই হ্রদে ৩ মাসের জন্য মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শুরুকেএনএফ প্রধান নাথান বমের স্ত্রী ‘নিখোঁজ’সাজেকে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯, পরিচয় মিলেছে ২ জনের!তীব্র তাপদাহ: জনগণকে সচেতন করতে প্রচারণায় নেমেছে রাঙামাটি স্বাস্থ্য বিভাগকাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫ ইউনিটের ৪টিই বন্ধ, উৎপাদন কমে ৩০ মেগাওয়াট

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১৮:১৪, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

নতুন আতঙ্ক পঙ্গপালের ঝুঁকিতে বাংলাদেশও

নতুন আতঙ্ক পঙ্গপালের ঝুঁকিতে বাংলাদেশও

ফাইল ছবি


কৃষিতে বিশ্বের নতুন আতঙ্ক পঙ্গপাল। নিরীহ এই পতঙ্গটি দল বেঁধে থাকলে হয়ে ওঠে ভয়ংকর। এদের আক্রমণে রাষ্ট্রে যে কোনো সময় দেখা ‍দিতে পারে দুর্ভিক্ষ। বর্তমানে এর আশঙ্কায় রয়েছে আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া। সেইসঙ্গে আক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশও। 

সম্প্রতি পাকিস্তান ও ভারতের পাঞ্জাবে আক্রমণ চালায় পঙ্গলপালের দল। এতে দেশগুলোর ওই অঞ্চলে কৃষি ও অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ে।

পাকিস্তানে আক্রমণের পর গত ১০ ফ্রেব্রুয়ারি একটি নির্দেশনা জারি করে ফাও। এতে আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার কয়েকটি কৃষি প্রধান দেশকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান তারা। 

এছাড়াও উগান্ডা, তাঞ্জানিয়া, সৌদি আরব, ইরিত্রিয়া এবং ইয়েমেনসহ কয়েকটি দেশে পঙ্গপাল হামলা চালাতে পারে বলে সাবধান করা হয়। দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান এবং ইরানকে সতর্ক করা হয়। 

জেনে নেয়া যাক পঙ্গপাল সম্পর্কে

পঙ্গপালের মরক তৈরির ইতিহাস পুরনো। এরা বাতাসের সঙ্গে উড়ে আসে। তাই কখন কোন অঞ্চল লক্ষ্য করে যাত্রা শুরু করে তা নির্ধারণ করা যায় না। এমনকি যাত্রা থামানোরও কোনো পদ্ধতি নেই।  

পুরনো মিশরীয়রা তাদের কবরে পঙ্গপাল এঁকেছিল। ইলিয়ড, বাইবেল এবং কোরআন ইত্যাদি গ্রন্থে এর উল্লেখ আছে। এদের দল বানানোর প্রবণতা বিংশ শতাব্দীতে কমে গেছে। আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও পঙ্গপাল অনুকূল অবস্থায় যে কোনো সময় দল গড়তে পারে যার ফলে দুর্ভিক্ষের সম্ভবনা রয়েছে।

পঙ্গপাল এবং ঘাস ফড়িংয়ের মধ্যে কোন পার্থক্যগত শ্রেণিভাগ নেই। একা থাকা অবস্থায় এই ঘাস ফড়িংগুলো অনুপকারী। তারা সংখ্যায় কম থাকে এবং কৃষির জন্য বিরাট কোনো আর্থিক ক্ষতি করে না। তবে অনাবৃষ্টির পর দ্রুত ফসলের বর্ধন হলে এদের মস্তিষ্কে থাকা সিরোটোনিন (serotonin) তাদের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তনের সূত্রপাত করে। ফলে তারা দ্রুত জন্মদান শুরু করে। তখন তারা একত্রে থাকে, যখন তাদের সংখ্যা বেশি হয় তারা যাযাবর হয়ে পড়ে। এতে থাকে পাখাবিহীন ছোট পঙ্গপাল যা পরে পাখা জন্মে দলে যোগ দেয়। এই পাখাবিহীন এবং পাখনাসহ পঙ্গপালের দল একসঙ্গে চলাচল করে এবং দ্রুত ফসলের মাঠের ক্ষতি করে। পূর্ণবয়স্ক পঙ্গপাল শক্তিশালী উড্ডুক্কু তারা অনেক দূর পর্যন্ত উড়তে পারে। আর পথে যেখানেই থামে সেখান থেকে ফসল খেয়ে শক্তি অর্জন করে।


 

 

পঙ্গপাল যখন ফসলের ক্ষেতে আক্রমণ করে, তখন তা একজন কৃষকের জন্য রীতিমত দুঃস্বপ্নের বিষয় হয়ে ওঠে। একটি পূর্ণ বয়স্ক পঙ্গপাল প্রতিদিন তার ওজনের সমপরিমাণ খাদ্য খেতে পারে। যে অঞ্চলে তারা আক্রমণ করে, সেখানে খাদ্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা অন্য অঞ্চলে যায় না। 

উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের মতে, একা থাকলে পতঙ্গ বেশ নিরীহ প্রাণী। কিন্তু দলবদ্ধ অবস্থায় এরা হয়ে ওঠে বিধ্বংসী।

জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (ফাও) বলছে, এক বর্গ কিলোমিটার আকারের পঙ্গপাল একসঙ্গে যে খাবার খায় তা দিয়ে ৩৫ হাজার মানুষকে এক বছর খাওয়ানো সম্ভব। একটি বড় পঙ্গপাল দিনে ১২০ মাইল পর্যন্ত জমির ফসল খেয়ে ফেলতে পারে।

প্রথম আক্রমণ শনাক্ত পাকিস্তানে

১৯৯৩ সালে ব্যাপক আকারে পঙ্গপালের আক্রমণের মুখে পড়ে পাকিস্তান। এই ধাপে ২০১৯ সালের মার্চে পাকিস্তানে প্রথম পঙ্গপালের আক্রমণ শনাক্ত হয়। পরে এটি সিন্ধু, দক্ষিণ পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনওয়া প্রদেশের নয় লাখ হেক্টর এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কোটি কোটি রুপি মূল্যের ফসল ও গাছপালা।

ভারত-পাকিস্তানের বাইরে সৌদি আরবও পঙ্গপালের আক্রমণের মুখে পড়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, পতঙ্গটির আক্রমণ দেশটির কৃষি খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

আফ্রিকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে সাত কোটি ডলারের অনুদান চেয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। সংস্থাটির প্রধান মার্ক লোকক বলেন, আফ্রিকায় এই ভয়াবহ পঙ্গপাল উদ্বেগজনক হারে ফসল ধ্বংস করছে। এরইমধ্যে খাদ্য স্বল্পতায় থাকা পরিবারগুলো তাই আরো বিপাকে পড়েছে।


 

 

পঙ্গপালের উপদ্রব ঠেকাতে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকরী পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি। তবে পঙ্গপাল নিয়ন্ত্রণে বাতাসে বা মাটিতে কীটনাশক ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। তাই বেশিরভাগ সময় উড়োজাহাজে বা বহনযোগ্য যন্ত্রের সাহায্যে কীটনাশক ছিটিয়ে এদের দমনের চেষ্টা করা হয়। তবে আফ্রিকায় পঙ্গপালের যে ভয়াবহতা তাতে শুধু কীটনাশক ব্যবহারে ফল মিলবে না বলে মনে করছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা। আর এই পরিস্থিতির জন্য তারা জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন।

ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

বাংলাদেশেও পঙ্গপাল আক্রমণের আশঙ্কা করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। তবে সে ঝুঁকি এ বছরের চেয়ে আগামী বছর বেশি বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক এজেডএম ছাব্বির ইবনে জাহান।

তিনি বলেন, যেহেতু পঙ্গপালের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বাতাসের উষ্ণতার গতি অনুযায়ী এরা চলাফেরা করে এবং এক জায়গার খাবার ফুরালেই নতুন জায়গার খোঁজ করে তারা। সে কারণে কৃষি অধিদফতরের আশংকা বাংলাদেশেও আক্রমণ হতে পারে পঙ্গপালের।

ছাব্বির ইবনে জাহান বলেন, পঙ্গপালের সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকানোর জন্য সরকার, জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন ফাও এর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তারা। গত ৫৫ বছরের মধ্যে পঙ্গপালের আক্রমণ এ অঞ্চলে হয়নি বলে তিনি জানান।

আলোকিত রাঙামাটি

জনপ্রিয়