রাঙামাটি । শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ , ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১৮:০৩, ২৫ জুলাই ২০২০

নৌবাহিনীর দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন ভাইস এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল

নৌবাহিনীর দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন ভাইস এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল

নবনিযুক্ত নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল আনুষ্ঠানিকভাবে নৌবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। তিনি পূর্বতন নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এ এম এম এম আওরঙ্গজেব চৌধুরী এর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। 

এ উপলক্ষে শনিবার নৌ সদর দফতরে দুপুরে দায়িত্বভার হস্তান্তর অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় নৌপ্রধানের কার্যালয়ে নবনিযুক্ত নৌপ্রধান ভাইস এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল কমান্ড হস্তান্তর বইতে স্বাক্ষরের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কমান্ড গ্রহণ করেন।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ রেজা-উল করিম শাম্মী এ তথ্য জানান। 

অনুষ্ঠানে নৌ সদরের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, সব আঞ্চলিক কমান্ডার, ডকইয়ার্ড/শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ঊর্ধ্বতন নৌ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

নবনিযুক্ত নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল এর জীবন বৃত্তান্ত:

ভাইস এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল ১৯৮০ সালের ১ জুন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যোগদান করেন। পরে ১৯৮২ সালের ১ ডিসেম্বর এক্সিকিউটিভ শাখায় কমিশন লাভ করেন। তার দীর্ঘ এবং সুপরিচিত ৪০ বছরের কর্মজীবনে তিনি দৃষ্টান্তমূলক সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন। তার পেশাদারিত্ব, সততা ও একনিষ্ঠতার জন্য তিনি নৌবাহিনীর সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও নাবিকদের কাছে সুপরিচিত। তিনি নৌবাহিনী ফ্রিগেটসহ সব শ্রেণির জাহাজ ও গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি কমান্ড করেছেন। 

এছাড়া তিনি নৌ সদরে সহকারী নৌপ্রধান (অপারেশন), সহকারী নৌপ্রধান (পার্সোনেল), পরিচালক নৌ অপারেশন, পরিচালক নৌ গোয়েন্দা, চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার, খুলনা নৌ অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গে পালন করেন। 

চাকরি জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সর্বোচ্চ নেতৃত্বের গুণাবলী, সুদূর প্রসারী চিন্তা ভাবনা, আন্তরিকতা ও সততার ছাপ রেখেছেন।

চাকরি জীবনে এডমিরাল শাহীন ইকবাল দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ ও সামরিক কৌশলগত শিক্ষা অর্জন করেছেন। তিনি প্রতিটি প্রশিক্ষণে উচ্চতর গ্রেডিং অর্জন এবং কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখায় নৌবাহিনী প্রধান এর কাছ থেকে সর্বোচ্চ প্রশংসা প্রাপ্তসহ নানা ধরনের সম্মানে ভূষিত হন। 

তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে নেভাল স্টাফ কোর্স, মেরিটাইম কম্পোনেন্ট কমান্ডার ফ্লাগ অফিসার্স কোর্স, ইন্টার সারফেস ওয়ার ফেয়ার কোর্স, ভারত থেকে এন্টি সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার কোর্স এবং মিরপুর ডিফেন্স কলেজ থেকে আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স ও এনডিসি কোর্সসহ দেশে বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেন। 

ভাইস এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল জাতীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বিশেষ অবদান রেখেছেন। ২০১৩ সালে খুলনা নৌ অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার এর দায়িত্ব পালনকালে তিনি বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিচারক ও বিশ্লেষক দলের সঙ্গে কাজ করেন এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেন।

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলের স্থানীয় ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং মিয়ানমার-টেকনাফ সিদ্ধান্তে মাদক ও মানব পাচার রোধে বিশেষ অবদান রাখাসহ জাতীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে পালন করেন।

২০১৭ সালে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পুনর্বাসনের জন্য ভাসানচর প্রকল্পের বাস্তবায়নে ভাইস এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল অন্যতম মূখ্য ভূমিকা পালন করেন। 

তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রকল্পের পরিকল্পনা, তদারকি ও বাস্তবায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্প সূচনার মাত্র ১০ মাসের মধ্যে এক লাখ রোহিঙ্গাদের জন্য একটি প্রত্যন্ত দ্বীপকে বাসযোগ্য করে তোলার মাধ্যমে তিনি সর্বমহলের ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেন।

বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনে ভাইস এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল আন্তর্জাতিক মেরিটাইম পরিমণ্ডলে একাধিকবার বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, ভারত, সৌদি আরব, কুয়েত ও কাতারসহ বিভিন্ন দেশে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম এবং সামরিক প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। তার অসামান্য একাডেমিক সাফল্য ও পেশাদারিত্বের জন্য নৌবাহিনীর সর্বোচ্চ পদক (এনবিপি) এবং নৌ উৎকর্ষ পদকে (এনইউপি) ভূষিত হন।

ব্যক্তিজীবনে ভাইস এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল ঢাকার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান, তার আদিবাস কুমিল্লায়। পারিবারিক জীবনে তিনি মিসেস মনিরা রওশন আক্তার এর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের একমাত্র ছেলে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (আইআরসি) ও জ্যেষ্ঠ প্রভাষক হিসেবে কর্মরত এবং তার স্ত্রী ইউএনএফপিএ-তে (UNFPA) গবেষক হিসেবে কাজ করছেন।

দেশ প্রেম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত ভাইস এডমিরাল এম শাহীন ইকবালের বিস্তৃত অভিজ্ঞতা, সাধারণ জীবন-যাপন এবং অসাধারণ নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা নৌবাহিনীর সর্বস্তরের সদস্যদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার উৎস। 

তার সুদক্ষ নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আরো সমৃদ্ধ হবে বলে সবার প্রত্যাশা। 

আলোকিত রাঙামাটি

জনপ্রিয়