রাঙামাটি । শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ , ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আলোকিত রাঙ্গামাটিঃ-

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

প্রতি শতকে একবার আসে এমন ভাইরাস, মারা যায় কোটি মানুষ!

প্রতি শতকে একবার আসে এমন ভাইরাস, মারা যায় কোটি মানুষ!

প্রতি শতকে একবার আসে এমন ভাইরাস


চা দোকান থেকে বাসার ছাদ—দেশের সব জায়গাতেই করোনাভাইরাস নিয়ে চলছে আলোচনা। খবরের কাগজেরও প্রধান শিরোনামে জায়গা নিয়েছে এ রোগ। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে আতংক। হওয়াটাই তো স্বাভাবিক; ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এক ভাইরাস এরইমধ্যে তৈরি করেছে চরম বিপর্যয়, কেড়ে নিয়েছে হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ, ক্ষতি করেছে বিলিয়ন ডলারের।

বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সন্ধান মিলেছে। ভাইরাসটির উৎপত্তি দেশ চীনের দশটিরও বেশি শহর বন্ধ হয়ে গিয়েছে এবং প্রায় সাত কোটি মানুষ বাসায় কোয়োরেন্টিন হয়ে আছে। পরিবহন বন্ধ এবং কারো বাড়ির বাইরে যাবারও অনুমতি নেই বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া। প্রশ্ন, এর শেষ পরিণতি কী? উত্তরটা কারো জানা নেই। সমাধান খোঁজার পাশাপাশি ইতিহাস মনে করছে শিউরে উঠছে কেউ কেউ। প্রতি শতকের ২০ সালেই একবার এমন মহামারি ঘটে, প্রাণ যায় অসংখ্য মানুষের। করোনাভাইরাসও কি বিশে নেমে আসা বিষ? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

 

১৭২০ সালের প্লেগে ২০ কোটি মানুষের মৃত্যু

 

১৭২০ সালের প্লেগ: ২০ কোটি মানুষের মৃত্যু

পৃথিবীর ইতিহাস একক কারণে এত মৃত্যু দেখেনি—ইউরোপ হারিয়েছে তার তখনকার জনসংখ্যার প্রায় অর্ধাংশ। জীবন হরণ করা এ মৃত্যুর নাম ‘দ্য ব্ল্যাক ডেথ’ বা কালো মৃত্যু। রোগের নাম প্লেগ। করোনাভাইরাসের কারণে মানুষে মানুষে ভালোবাসা কমে যাচ্ছে, তা প্লেগের কারণেও হয়েছিল।

ইতিহাস বলছে, ইউরোপের যে সমাজ কাঠামো, তা ভেঙে দিয়েছে প্লেগ। এ রোগ ছড়িয়ে পড়ার পর নাগরিকরা একে-অন্যকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। পাশের বাড়ির মানুষের দিকে চোখ তুলে তাকায় না, তারা পরস্পরকে পরিত্যাগ করেছে। এ দুর্যোগ পুরুষ ও নারীর মন যেভাবে সন্ত্রস্ত করেছে। ভাই-ভাইকে, ভাই-বোনকে, বোন-ভাইকে, এমনকি স্ত্রী তার প্লেগ আক্রান্ত স্বামীকে পরিত্যাগ করেছে। সবচেয়ে অবিশ্বাস্য হচ্ছে- বাবা-মাও একটি পর্যায়ের পর আক্রান্ত সন্তানের ওপর থেকে চোখ সরিয়ে নিতে বাধ্য হন। এ বর্ণনা বোক্কাচ্চিওর।

মধ্যযুগীয় ইতিহাস গবেষক ফিলিপ ডেইলিভার তার এক নিবন্ধে লিখেছেন, চার বছর মেয়াদি প্লেগ মড়কে ইউরোপের ৪৫-৫০ ভাগ জনসংখ্যা বিলীন হয়ে যায়, যা প্রায় ২০ কোটি। তবে ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় এ হিসাবের তারতম্য দেখা যায়। যেমন ইতালি, দক্ষিণ ফ্রান্স ও স্পেনে ৭৫-৮০ ভাগ মানুষের মৃত্যু হয়; কিন্তু জার্মানি ও ইংল্যান্ডে জনসংখ্যার ২০ ভাগ প্লেগের বলি হয়।

 

কলেরা সর্বশেষ মহামারি হয় ইয়েমেনে

 

১৮২০ সালের কলেরা: লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি

চোখ বন্ধ করে একবার কলেরা রোগের কথা ভাবুন। আপনার কল্পনায় নিশ্চয়ই লাখ লাখ মানুষের আর্তনাদ, অপরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট, শিশুদের চিৎকারের দৃশ্য ভেসে আসবে। ১৮০০ সাল থেকে সারাবিশ্বে কলেরা মহামারি শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত কয়েক লাখ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষ কলেরায় প্রাণ হারিয়েছেন। তবে ১৮২০ সালে ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কলেরায় আক্রান্ত এলাকার দৃশ্য ছিল একেবারেই ভিন্ন।

১৮২০ সালে কলেরায় আক্রান্ত পূর্ব এশিয়ার দৃশ্য কেমন ছিল? প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন অনেক ইতিহাসবিদ। তাদের মতে, সেই সময়ে অল্পদিনের ব্যবধানে হাজার হাজার আক্রান্ত ব্যক্তি মারা যান এবং প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা যে হারে বেড়েছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক ছিল। হাসপাতালও ছিল একেবারে কম। যা ছিল ভরে যায় অল্প সময়েই, রোগী রাখার ঠাঁই নেই কোথাও। ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং সর্বত্র এক ভীতিকর পরিস্থিতি।

বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, কলেরা এতটাই মহামারি ছিল যে- চীন, রাশিয়া ও ভারতে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশ শতকে কলেরা সবচেয়ে বড় আঘাত হানে। এতে দুই দশকে দেশটির প্রায় ৮ লাখ মানুষ প্রাণ হারান। ২০১৭ সালে ইয়েমেনে এক সপ্তাহে কলেরায় অন্তত ১১৫ জনের মৃত্যু হয়। কলেরার কারণে দেশটির রাজধানী সানায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল।

 

১৯২০ সালের স্প্যানিস ফ্লুতে মারা যায় ৫ কোটি মানুষ

 

১৯২০ সালের স্প্যানিস ফ্লু: মারা যায় ৫ কোটি মানুষ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত না শুকাতেই পৃথিবীজুড়ে শুরু হয়েছিল নতুন আরেক যুদ্ধ। সারা পৃথিবীকে গ্রাস করতে চাইল এক মরণব্যাধি, নাম ‘স্প্যানিস ফ্লু’। ‘স্প্যানিস ফ্লু’ নামের সেই মহামারীতে পরের দুই বছরে সারা পৃথিবীতে মানুষ মারা গেলেন চারকোটির বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যদিও বলছে সংখ্যাটি আসলে পাঁচ কোটি; কারণ ভারতবর্ষে যে এক কোটি মারা গিয়েছিলেন সেটি রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কোনো কোনো গবেষকের মতে, মৃতের সংখ্যাটি প্রকৃতপক্ষে প্রায় ১০ কোটি।

নতুন ধরনের সেই ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রথম দেখা গিয়েছিল ১৯১৮ সালের ৪ মার্চ—কানসাসের আমেরিকান সেনাসদস্যদের মধ্যে। ততদিনে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সৈন্যরা ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। হেমন্ত কাল বা আগস্ট মাস আসতেই ঝড়ের গতিতে ছড়াতে শুরু করলো সেই জ্বর। বয়স নির্বিচারে আক্রান্ত হলেও বেশি প্রকোপ যেন দেখা গেল ২০-৪০ বছরের মানুষের মধ্যে।

উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে আক্রমণ হলেও সারা পৃথিবীর কোনো দেশই মুক্তি পায়নি এ জ্বরের ছোবল থেকে। মৃতের সংখ্যা এত বিশাল ছিল যে, ট্রলিতে লাশ বোঝাই করে শহর থেকে সরাতে হয়েছে। বলে রাখা যেতে পারে যে, স্প্যানিস ফ্লু দ্বিতীয় দফা আসে ১৯১৯ সালের বসন্তে। কোনো কোনো জায়গায় তৃতীয়বারের ধাক্কাও এসেছিল, আর সেটার সময় ছিল ১৯২০ সালে।

 

২০২০ সালের অতঙ্ক করোনাভাইরাস

 

করোনাভাইরাস কি শতকের ধারাবাহিকতা?

প্রশ্নের উত্তর যা-ই হোক, যা ঘটছে তার কিছুটা হলেও শুনছেন। চীনে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ৬৬৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮ হাজার ৫৮৪ জন। চীনের বাইরে প্রায় ৩০টি দেশে করোনাভাইরাস সংক্রামিত হয়েছে। ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে ফ্রান্সে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ফিলিপাইন, হংকং, জাপানে একজন করে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পরিসংখ্যান ও ছড়িয়ে পড়ার ধরণ দেখে অনেকে বলছেন এটা শতকের ধারাবাহিকতা।

এ বিষয়ে দেশের গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ডা. আব্দুন নূর তুষার বলেন, ১৭২০ সালের পর আরো ৬ বার প্লেগ আউটব্রেক হয়েছে। অসংখ্য  কলেরা আউটব্রেক হয়েছে। তাই সাল মিলিয়ে এসব আড্ডা দেয়ার টপিক ভাইরাল করে আতংক বাড়ানোর কোনো কারণ নেই।  বরং ঠান্ডা মাথায় রোগ থেকে প্রতিরক্ষার জন্য জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চলুন।

আলোকিত রাঙামাটি

জনপ্রিয়