রাঙামাটি । শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ , ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১১:৩৮, ১৮ নভেম্বর ২০২০

প্রতিষ্ঠার ৫৫ বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

প্রতিষ্ঠার ৫৫ বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়


আয়তনে দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) গৌরব ও সাফল্যের ৫৫ বছরে পা দিলো। সৌন্দয্যের লীলাভূমিখ্যাত চবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। শহরের কোলাহল আর যান্ত্রিকতা থেকে দূরে অবস্থিত এ ক্যাম্পাস যেন প্রকৃতির কোলে গড়ে ওঠা এক অপরূপ ও অনন্য নৈস্বর্গ। 

দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এ বিদ্যাপীঠ যেন প্রকৃতি আর মানব প্রাণের মেলবন্ধন। সবুজ বৃক্ষসারির ওপর উড়ন্ত বিচিত্র রঙের হরেক রকম পাখি, সবুজ পাহাড়ের কোলে থাকা হরিণ, অজগর কিংবা বিচিত্র আর দুর্লভ প্রাণীর জীবন্ত জাদুঘর চবি ক্যাম্পাস। ঝুলন্ত সেতু, ঝর্ণাধারা, উদ্ভিদ উদ্যান, জাদুঘর, রহস্যময় চালন্দা গিরিপথ কিংবা সুবিশাল মাঠ কি নেই চবি ক্যাম্পাসে! 

প্রতিষ্ঠার ইতিহাস:
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর। চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের জোবরা গ্রামে পাহাড়ঘেরা ২১০০ একর সমতল-উঁচুনিচু ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে বাংলা, ইংরেজি,ইতিহাস ও অর্থনীতি এ চারটি বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়।

যাত্রালগ্নের চারটি বিভাগের স্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ৯টি অনুষদের অধীনে ৪৮ টি বিভাগ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ৭টি ইনস্টিটিউট এবং ৬টি গবেষণা কেন্দ্র। যাতে রয়েছে ২৩ হাজার ৫৫৪ জন শিক্ষার্থী। আর পাঠদানে নিয়োজিত রয়েছেন ৯২৫ জন শিক্ষক।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রালগ্নে প্রথম ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পান প্রফেসর ড. আজিজুর রহমান (এ আর) মল্লিক। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮তম ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার।

চবি’র মায়াবি সৌন্দর্য উপভোগ করতে অনেকেই ঘুরতে আসেন ক্যাম্পাসে। নিঝুমপুরী খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয় হতাশ তো করেই না বরং পুনরায় আসার স্পৃহা সৃষ্টি করে। কী নেই এখানে? 

চবি ঝর্ণা: কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের পেছনে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন এক পাহাড়ি ঝর্ণা। পাহাড় থেকে নেমে আসা জলরাশির খেলা ও ঝর্ণার পাশের দৃশ্য দেখতে আসা প্রকৃতিপ্রেমিদের পদচারণায় মুখরিত থাকে এই স্থানটি।

ঝুলন্ত সেতু: রাঙামাটির সৌন্দর‌্যও দেখা যায় চবি ক্যাম্পাসে। রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুর মত চবিতেও রয়েছে হৃদয়কাড়া ঝুলন্ত সেতু। সেতুটি সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের কাছে অবস্থিত। বর্তমানে সেতুটি অবহেলায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। 

শাটল ট্রেন: চবির বড় বিশেষত্ব হলো শাটল ট্রেন। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে আছে এটি। ক্যাম্পাস শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য শাটলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিদিন ১২-১৩ হাজার শিক্ষার্থীর যাতায়াতের মাধ্যম এই শাটল ট্রেন। পৃথিবীতে একমাত্র চবিতে বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেন এখনো চলাচল করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ বলা হয় শাটল ট্রেনকে।

কাটাপাহাড়: প্রধান ফটক থেকে সামনের দিকে বিশাল পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বিস্মৃত পিচঢালা রাজপথ, যার নাম কাটা পাহাড়। দুপাশে সুউচ্চ পাহাড় মাঝখান দিয়ে রাস্তা, একটু পরপর যাত্রী ছাউনি এবং পাহাড়ের উঁচু উঁচু টিলাতে, গাছ-গাছালিতে নানা প্রজাতির বণ্যপ্রাণী এবং মায়া হরিণের লুকোচুরি সত্যিই দর্শনার্থীর মুহূর্তেই নজর কেড়ে নিতে সক্ষম। 

অর্জনে চবি: অর্জনেও পিছিয়ে নেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। দীর্ঘ ৫৪ বছরে এ বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি করেছে অনেক রথী-মহারথীর। বিশ্বখ্যাত ভৌত বিজ্ঞানী প্রফেসর ইমিরেটাস জামাল নজরুল ইসলাম এর মধ্যে অন্যতম। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। ছাত্রজীবনে তিনি বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংসহ অনেকের সান্নিধ্যে ছিলেন। জামাল নজরুলের অনেক গ্রন্থ আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। বিশ্বের খ্যাতনামা বেশকয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসেও তাঁর গ্রন্থগুলো পাঠ্যক্রম হিসেবে ঠাঁই করে নিয়েছে।

দেশের একমাত্র নোবেল জয়ী ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূসও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তাঁর হাতে গড়া গ্রামীণ ব্যাংক এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী জোবরা গ্রাম থেকেই যাত্রা শুরু করে। সাহিত্যিক আবুল ফজল ও ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল মান্নান এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, ঢাকা উত্তরের সাবেক সিটি মেয়র প্রয়াত আনিসুল হকের মত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন।

অন্যদিকে সাহিত্যিক সৈয়দ আলী আহসান, আনিসুজ্জামান, আহমদ শরীফ, চিত্রশিল্পী মর্তুজা বশীর, চিত্রশিল্পী রশিদ চৌধুরী, সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদের মত ব্যক্তিত্বরাও এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রাপ্ত আলোকচিত্র শিল্পী ফয়সাল আজিমও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। ২০১১ সালে ব্যাঙের নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন তরুণ বিজ্ঞানী সাজিদ আলী হাওলাদার। তিনিও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী।

আলোকিত রাঙামাটি