রাঙামাটি । বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ , ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১৬:৩৪, ৪ মে ২০২০

প্রবাসে শ্রমবাজার রক্ষায় সরকারের উদ্যোগ

প্রবাসে শ্রমবাজার রক্ষায় সরকারের উদ্যোগ

নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মহামারিতে বিপর্যস্ত প্রবাসে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশিদের শ্রমবাজার রক্ষায় সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। করোনার কারণে প্রবাসে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী বেকার হয়ে পড়েছেন। তাঁদের যাতে ফেরত পাঠানো না হয় সে জন্য সরকার সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি প্রবাসী কর্মীদের খাদ্য সহায়তা দিতে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে জরুরি তহবিল পাঠাচ্ছে সরকার। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের বর্তমান পরিস্থিতিতে নিতান্ত বাধ্য না হলে দেশে না ফেরার পরামর্শ দিয়েছেন।

সূত্রগুলো বলছে, পর্যায়ক্রমে কিছু কর্মী ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। তাঁরা মূলত ওই দেশগুলোয় অবৈধভাবে অবস্থান করছেন বা অপরাধ করে সাজা ভোগ করেছেন। তাঁদের অনেকে নিজেরাই দেশে ফিরতে চান। প্রায় তিন হাজারের বেশি কর্মী দেশে ফেরত নিয়ে আসার তালিকায় রয়েছেন।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেড় থেকে দুই লাখ শ্রমিক হয়তো পর্যায়ক্রমে দেশে ফেরত আসতে পারে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, ওমান, কাতার, কুয়েত, বাহরাইনসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে শ্রমিক ফেরত আনতে চাপ রয়েছে। আমাদের মন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী—দুজনই নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন, যেসব দেশে শ্রমিকরা খুবই সমস্যায় আছে পর্যায়ক্রমে  তাদের ফেরত আনা হবে। এরই মধ্যে কুয়েত, আমিরাত, বাহরাইন ও সৌদি আরব থেকে দেড় হাজারের বেশি শ্রমিক ফেরত এসেছে। করোনার কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সার্বিক পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তার ওপর আরো অনেক শ্রমিকের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।’

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শ্রম বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় আন্ত মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি কাজ করছে। যেসব দেশে শ্রমিকরা সমস্যয় আছে, ওই সব দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে যোগাযোগ চলছে। ৩০টি মিশনের মাধ্যমে প্রায় ১০ কোটি টাকা শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।’

অভিবাসন ও মানবপাচার বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটিং মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ‘জনশক্তি নিয়ে কাজ করা বেসরকারি ১৬টি সংগঠন মিলে জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে আমরা একটি চিঠি পাঠিয়েছি। ওই চিঠিতে আমরা দাবি করেছি, কর্মীদের এভাবে প্রবাস থেকে জোর করে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। আমাদের প্রত্যাশা, প্রবাসী শ্রমিকদের ওপর অন্যায়ের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী বহুপক্ষীয় ফোরামগুলোয় তুলে ধরবেন।’

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রগ্রামের প্রধান ও অভিবাসন বিশ্লেষক শরিফুল হাসান বলেন, ‘ফিরে আসা দেড় হাজারেরও বেশি শ্রমিকের অধিকাংশকেই ডিপোর্টেশন সেন্টার থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন দেশে কর্মহীন, বৈধ শ্রমিক কিংবা অবৈধ শ্রমিকদের পাঠানো এখনো শুরু হয়নি।’

তিনি বলেন, “তথাকথিত ‘ফ্রি ভিসার’ নামে সৌদি আরব গেছে এবং অবৈধভাবে আছে এমন শ্রমিক তিন থেকে চার লাখ। মালয়েশিয়ায় বৈধ কাগজপত্রহীন প্রবাসী আছে লক্ষাধিক, কুয়েতে ২০ হাজারের বেশি। সব মিলিয়ে পাঁচ থেকে ১০ লাখ প্রবাসী শ্রমিক আছে, যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই। এসব শ্রমিককে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হলে কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়বে শ্রমবাজার। এর মধ্যে করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকদের দেশে ফেরত আসতে হলে ভয়ংকর বিপর্যয় দেখা দেবে।”

কূটনেতিক সূত্রগুলো বলছে, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন বৈধ কাউকে ফেরত পাঠাচ্ছে না। বাহরাইন অবৈধদের বেশির ভাগকে বৈধ হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। কুয়েত অবৈধদের জন্য সাধারণ ক্ষমার আওতায় দেশে ফেরার সুযোগ দিচ্ছে। ইতালিও কৃষি শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ করোনার কারণে তাদের কারাগারের ওপর চাপ কমাতে দণ্ডিত প্রবাসী বাংলাদেশি অপরাধীদের ফেরত পাঠাতে চায়।

অভিবাসী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফেরত এসেছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে প্রায় চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত দেড় লাখের বেশি শ্রমিক সেখানে যেতে পারেননি। আর এক কোটি প্রবাসীর বেশির ভাগের হাতে এখন কোনো কাজ নেই। মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ অবৈধ কর্মীদের ফেরত আনতে চাপ দিচ্ছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, ‘এই করোনা মহামারির কারণে ওরা এবং আমরা উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত। এ কারণে সেখান থেকে বৈধ প্রবাসী শ্রমিকদের ছাঁটাই করে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। কিন্তু বৈধ কাগজপত্রহীন শ্রমিকও তো অনেক আছে। এরই মধ্যে সমস্যায় থাকা ৩০টি দূতাবাসের মাধ্যমে প্রায় ১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে প্রবাসীদের জন্য। আর ফেরত আসা প্রবাসী শ্রমিকদের পুনর্বাসনে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

আলোকিত রাঙামাটি

জনপ্রিয়