রাঙামাটি । শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ , ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রেকিং

পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ দেখিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব : কাপ্তাইয়ে প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাপার্বত্যাঞ্চলের পরিস্থিতি অবনতি ঘটলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে : বীর বাহাদুর ঊশৈসিং এমপিসাজেকে নিহত ৯ জনের ময়নাতদন্ত শেষে হস্তান্তর, আহত ২ শ্রমিককে ঢাকায় প্রেরণকাপ্তাই হ্রদে ৩ মাসের জন্য মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শুরুকেএনএফ প্রধান নাথান বমের স্ত্রী ‘নিখোঁজ’সাজেকে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯, পরিচয় মিলেছে ২ জনের!তীব্র তাপদাহ: জনগণকে সচেতন করতে প্রচারণায় নেমেছে রাঙামাটি স্বাস্থ্য বিভাগকাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫ ইউনিটের ৪টিই বন্ধ, উৎপাদন কমে ৩০ মেগাওয়াট

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১৮:৩০, ২৬ জুন ২০২০

প্রাক্‌–প্রাথমিকের মেয়াদ বাড়ছে, শিশুর বয়স চার পার হলেই স্কুল

প্রাক্‌–প্রাথমিকের মেয়াদ বাড়ছে, শিশুর বয়স চার পার হলেই স্কুল

দেশের সরকারি প্রাথমিক শিক্ষায় বড় ধরনের সংস্কার হতে যাচ্ছে। সরকার প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা দুই বছর মেয়াদি করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে বয়স চার বছর পার হলেই শিশুরা স্কুলে যাবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

বর্তমানে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুরা প্রাক্‌–প্রাথমিকে এক বছর পড়াশোনা করে। এরপর প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।

প্রথম দফায় আগামী বছর দেশের ২ হাজার ৫৮৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই ব্যবস্থা চালু হবে। পরে সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে তিন থেকে চার বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সব বিদ্যালয়ে তা চালু হবে। শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা এই উদ্যোগকে যুগোপযোগী বলছেন। তবে তাঁরা এও বলছেন, এটি যেন পরীক্ষানির্ভর পড়াশোনা না হয়। খেলা ও আনন্দের মাধ্যমে যেন শিশুদের পড়াশোনার প্রতি আকৃষ্ট করা হয়।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, তাদের নেওয়া এই সংস্কার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী এ–সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়ে সই করেন। যেটি তাদের কাছে এসেছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন বৃহস্পতিবার এই তথ্য নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, আগামী বছর থেকেই নতুন এই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। আগামী সোমবার সভা করে কীভাবে এটি বাস্তবায়ন করা হবে, তার কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান বুরোর তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে পড়ে প্রায় পৌনে দুই কোটি ছেলেমেয়ে। সরকারি, এনজিও পরিচালিত আর কিন্ডারগার্টেনসহ সব মিলিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে সোয়া লাখের কিছু বেশি। এর মধ্যে কিন্ডারগার্টেনগুলোয় অনেক কম বয়সী শিশুদেরও ভর্তি করা হয়। তবে ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের এক বছর মেয়াদি প্রাক্‌-প্রাথমিকে এবং ছয় বছরের বেশি বয়সী শিশুদের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়।

দেশে প্রথমে ২০১০ সালে স্বল্প পরিসরে প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয়। এরপর ২০১৪ সালে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক বছর মেয়াদি প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয়।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা চালুসহ বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে প্রাথমিকে ঝরে পড়া কমেছে। ২০১০ সালে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ছিল ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ। সেটি কমে ২০১৯ সালে হয় প্রায় ১৮ শতাংশ। প্রাক্‌–প্রাথমিক শিক্ষা চালুর পর থেকে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির হার, প্রাথমিকের শিক্ষাচক্র সমাপনী ও উপস্থিতির হার এবং সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হারও বেড়েছে।

জাতীয় শিক্ষানীতিতেও পর্যায়ক্রমে দুই বছর মেয়াদি প্রাক্‌–প্রাথমিক শিক্ষা চালুর কথা বলা হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা–২০৩০–এ পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ইউনেসকোর ২০১৬ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উন্নত বিশ্বের ৫২ শতাংশ দেশে তিন বছর মেয়াদি ও ৩৩ শতাংশ দেশে দুই বছর মেয়াদি প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা আছে। জাপান, কোরিয়া, চীন, সিঙ্গাপুরসহ প্রতিবেশী দেশ ভারতেও প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা চালু আছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করছে, সরকারিভাবে দেশে দুই বছর মেয়াদি প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা চালু না থাকায় শহর ও গ্রামের মধ্যে বেসরকারি উদ্যোগে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রসার যেমন ঘটছে, তেমনি অসম প্রতিযোগিতা ও বৈষম্য বাড়ছে। শিক্ষার ব্যয়ও বাড়ছে। গণসাক্ষরতা অভিযানের করা এডুকেশন ওয়াচের–২০১৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার ব্যয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রায় নয় গুণ বেশি। এসব সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা দুই বছর মেয়াদি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শিশুরা খেলবে, কথা শিখবে, গাইবে, স্কুলের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হবে–ব্যবস্থাটি যদি এমন হয়, তাহলে দুই বছর মেয়াদি প্রাক্‌–প্রাথমিক শিক্ষা ভালো হবে। আর যদি একজন শিক্ষক দিয়ে শিশুদের কেবল একটি রুমে আটকে রেখে শেখানোর চেষ্টা হয়, তাহলে দুই বছর না করাই ভালো।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মনে করে এটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ। তবে এটি যেন পরীক্ষানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা না হয়। খেলতে খেলতে শিশুরা যেন পড়াশোনার প্রতি আকৃষ্ট হয়।’ তিনি বলেন, এর ফলে তিন ধরনের সুবিধা হবে। প্রথমত, শিশুদের স্কুলগামী করা যাবে। এতে ঝরে পড়া কমবে। দ্বিতীয়ত, স্কুলের প্রতি অভিভাবকদের সংযুক্ততা বাড়বে। তৃতীয়ত, শিক্ষকেরাও শিশুদের প্রতি যত্মশীল হওয়ার প্রস্তুতিটি নিতে পারবেন, যা পরবর্তী শ্রেণিতেও কাজে লাগবে।

যেভাবে বাস্তবায়ন হবে

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন অংশীজনদের মতামত নিয়ে দুই বছর মেয়াদি এই ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড শিক্ষাক্রম ও শিখণ সামগ্রীর উন্নয়ন করবে। প্রথম পর্যায়ে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে ২ হাজার ৫৮৩টি বিদ্যালয়ে দুই বছর মেয়াদি এই শিক্ষা চালু হবে। পরে এর ফলাফল পর্যালোচনা করে তার ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি (তিন থেকে চার বছর) পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই সময়ে শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ ছাড়া শিশুদের যত্নের জন্য প্রতি বিদ্যালয়ে একজন করে আয়া নিয়োগ করা হবে।

গ্লোবাল পার্টনার ফর এডুকেশন থেকে ৫৩ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে, যা প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা প্রচলনের কাজে ব্যবহার করার সুযোগ আছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

আলোকিত রাঙামাটি

জনপ্রিয়