রাঙামাটি । বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ , ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১৫:২৩, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

প্লাস্টিকের বোতলে জ্বলছে আলো, নেপথ্যে এই যুবক

প্লাস্টিকের বোতলে জ্বলছে আলো, নেপথ্যে এই যুবক

ছবিঃ সংগৃহীত


পাহাড়ে সূর্যাস্তের পরপরই ঘিরে বসে অন্ধকার। তাই আলো ফোটাতে ব্যবহার করা হয় কেরোসিনের কুপি। এই কেরোসিনের বিষাক্ত ধোঁয়া হুমকির মুখে পড়ে দরিদ্র পরিবার। তাই আলো ছড়ানো নতুন এক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন সানজিদুল আলম সিবান শান। তিনি চট্টগ্রামের এক তরুণ। বোতলবাতি উদ্ভাবন করে তাক লাগালেন সবাইকে।

২০১৫ সালে বোতল বাতির আইডিয়া ঢুকে যায় সানজিদুলের মাথায়। কাজ শুরু করে দিলেন। এই আইডিয়াটির নাম দেয়া হলো ‘লিটার অফ লাইট বাংলাদেশ’। একটি গবেষণা ভিত্তিক সামাজিক প্রতিষ্ঠান। যারা গবেষণা, উদ্ভাবন এবং উদ্ভাবিত চিন্তাগুলো বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়। 

লিটার অফ লাইটের দুই ধরনের লাইট আছে। সোলার  ল্যাম্প এবং সোলার স্ট্রিট লাইট। যা তৈরি হয় প্লাস্টিকের বোতল, পিভিসি পাইপ, ব্যাটারি, ছোট সোলার প্যানেল ও সার্কিট দিয়ে।

 

 

কেনো বোতলবাতি?

সোলার ল্যাম্পটির মূল অংশ দুইটি। ছোটো সোলার চার্জার ও ব্যাটারি সমৃদ্ধ লাইট। লাইটটির ক্যাসিং তৈরি হয় পিভিসি পাইপ এবং পিভিসি ক্যাপ দিয়ে। যার ভেতরে থাকে একটি রিচার্জেবল ব্যাটারি, একটি চার্জিং সার্কিট, একটু পুশ সুইচ, একটি চার্জিং সকেট। আলোর জন্য এটিতে আছে একটি এলইডি টিউব। এই লাইটটিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য আবরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয় এক লিটারের স্বচ্ছ বোতল। ল্যাম্পটি চার্জ করার জন্য সোলার প্যানেলটি রোদে রেখে এর সঙ্গে থাকা তারের কর্ডটি লাইটের সকেটে লাগাতে হয়।

অন্যদিকে স্ট্রি লাইট তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় ১৫-২০ ফিটের উঁচু পিভিসি পাইপ, কিছু পিভিসি এঙ্গেল, দুইটি রিচার্জেবল ব্যাটারি, একটি চার্জিং সার্কিট, একটি অটো অন অফ সার্কিট, একটি এলইডি টিউব। যার আবরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয় একটি প্লাস্টিকের বোতল। লাইটটিকে প্রতিদিন চার্জ করার জন্য পিভিসি পাইপের উপরে লাগানো থাকে একটি সোলার প্যানেল, যা দিনের বেলায় লাইটকে চার্জ করতে সক্ষম। সন্ধ্যা হলেই জ্বলে উঠে এবং দিনের আলো ফুটলেই লাইটটি বন্ধ হয়ে যায়। প্লাস্টিক ৫০০ বছরেও পঁচে না যা পরিবেশের অকল্পনীয় ক্ষতি করছে। এজন্যই এই উদ্যেগের মাধ্যমে ফেলে দেয়া প্লাস্টিক বোতল পুনরায় ব্যবহার করা হয়।

 

 

আলোকিত করার ব্রত নিয়ে কাজ করে যাওয়া লিটার অফ লাইটের একটি প্রকল্প আছে যার নাম ‘লাইটগিভার’। এই প্রকল্পে তারা প্রতি মাসে অন্তত দেশের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল আলোকিত করার চেষ্টা করে। বিভিন্ন কোম্পানির স্পন্সর সহায়তা নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী স্বেচ্ছাসেবী দিয়ে সোলার ল্যাম্প ও স্ট্রিট লাইট তৈরি করা হয়।

 

 

রোহিঙ্গারাই তৈরি করছে লাইট

লিটার অফ লাইট বাংলাদেশ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এনজিওর সঙ্গে যুক্ত হয়ে রোহিঙ্গা এবং রোহিঙ্গারা আসার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশিদের নিয়ে তাদের এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পটি শুরু করে। তেমনই একটি প্রকল্প নেদারল্যান্ডের আইসিসিও কো. অপারেশন এবং জার্মান সংস্থা জিআইজেটের পার্টনারশিপে বর্তমানে চলমান রয়েছে। যা কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার ২৫ জন তরুণ-তরূণীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। প্রশিক্ষণ শেষে তারা ক্ষুদ্র আকারে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য প্রকল্প থেকে মূলধন পাবে। তাদের তৈরি লাইট যাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে, স্থানীয় লোকজনের কাছে। বিভিন্ন এনজিওরা ল্যাম্প, স্ট্রিট লাইট কিনে সেগুলো রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও স্থানীয় এলাকায় স্থাপন করবে। বর্তমানে এনজিওরা যেসব স্ট্রিট লাইট স্থাপন করছে সেই লাইটের ৫ ভাগের ১ ভাগ অর্থ দিয়েই এই লাইটগুলো স্থানীয়ভাবে তৈরি করা হয়।

 

 

সানজিদুল আলম সিবান শান তার চিন্তায় দেশের সমস্যা সমাধানে উদ্ভাবনকে কাজে লাগাতে এই প্রতিষ্ঠান শুরু করে। শুরুর দিকে অনেক বাধা থাকলেও পরে বিভিন্ন কোম্পানি, আন্তর্জাতিক সংস্থা যুক্ত হওয়ায় কাজ এগিয়ে নেয়ার পথ সুগম হয়েছে। তারা দুটি টিম কাজ করছে। একটি স্বেচ্ছাসেবী, যারা ‘লাইটগিভার’ প্রকল্প পরিচালনা করে। আরেকটি অফিশিয়াল স্টাফ, যারা ব্যবস্থাপনা এবং এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প পরিচালনা করে। ‘চেঞ্জমেকার’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে ৩ মাসের জন্য যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যুক্ত হতে পারবে গবেষণা, ফিল্ড স্টাডি, ইঞ্জিনিয়ারিং, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কাজে।

আলোকিত রাঙামাটি

জনপ্রিয়