রাঙামাটি । শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ , ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ-

প্রকাশিত: ১৩:২১, ২৯ অক্টোবর ২০২০

ফিরে দেখাঃ- অস্ত্র সহ ভান্তে আটক ও সুদৃঢ় তাৎপর্য

ফিরে দেখাঃ- অস্ত্র সহ ভান্তে আটক ও সুদৃঢ় তাৎপর্য

ছবি:- আলোকিত রাঙ্গামাটি

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ- 'শস্যের চেয়ে টুপি বেশী, ধর্মের আগাছা বেশী' লালসালু লিখতে গিয়ে সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ আবহমান বাংলার যে ছবি এঁকেছিলেন তার ছাপ এখন পাহাড়েও এসে পড়েছে।

বাংলাদেশে ধর্ম প্রচার করতে রয়েছে অবাধ স্বাধীনতা। পাবর্ত্য চট্টগ্রামও তার ব্যতিক্রম নন। বরং দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় এ স্বাধীনতা এখানে একটু বেশীই। কয়েক দিন আগে (২৬ অক্টোবর, ২০২০) তারিখের “অস্ত্র সহ আটক ভান্তে” খবরটি দেশবাপী আলোড়ন তোলার কথা ছিল, কথা ছিল দেশব্যাপী হৈচৈ বা সাড়া ফেলে দেওয়ার, কিন্তু হলো উল্টোটা।

রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার ৪নং কলমপতি ইউনিয়নের মাঝেরপাড়া ও নাইল্যাছড়ি সড়ক থেকে অস্ত্র সহ ৩ উপজাতীয় সন্ত্রাসী ও ১ বৌদ্ধ ধর্মীও গুরু বা ভান্তে কে আটক করা হয় গোপন তথ্যের ভিত্তিতে। ২৬/১০/২০২০ ইং সোমবার সকাল ৮ টায় ঐ বৌদ্ধ ভিক্ষু সহ মোট ৪ জনকে আটক করার খবর নিশ্চত করা হয়েছে।

মোটামুটি কাহিনী এমন হলেও এর পিছনে রয়েছে অসংখ্য “কি” এবং “কেন” প্রশ্ন। যেমনঃ-

১। কেন কোন উল্লেখযোগ্য মিড়িয়া (প্রিন্ট ও অনলাইন) অস্ত্র সহ আটক ভান্তের খবর প্রকাশ করেনি? 
২। নাইল্যাছড়ি হয়ে মাঝেরপাড়া ডাকাতি করতে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে স্থানীয়রা সংঘবদ্ধভাবে ধাওয়া দিলে ডাকাতদল রাতে বৌদ্ধ ধর্মীও ভান্তের আশ্রয় গ্রহণ করে। বৌদ্ধ ভিক্ষু তাদের আশ্রয় দেওয়ার কারণ কি?
৩। সন্ত্রাসী ও ভান্তে আটক হওয়ার পর তারা পুলিশকে সঠিক নাম-ঠিকানা না দিয়ে কেন ভূল নাম ঠিকানা দিয়েছিল।
৪। পুলিশ কেন এবং কাদের স্বার্থে ভান্তের নাম ঠিকানা গোপন করে? “তথ্য ও নাম ঠিকানা দেওয়া নিষেধ” এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কে?
৫। সন্ত্রাসী এই ভান্তে কে বাঁচাতে কে বা কারা তদবির, ফোন বা থানায় লোক পাঠিয়ে ছিল?
৬। অস্ত্র সহ যদি কোন হুজুর বা ঈমাম অথবা কোন ব্রাহ্মণ গ্রেফতার হলে তখন ঘটনা কি একি রকম ঘটতো!

মিড়িয়ার কাজ হচ্ছে সত্য তুলে ধরা। অনুরোধে সত্য থেকে পিছানোর কোন সুযোগ মিডিয়ার নেয়া উচিত নয়। জনগণের আয়নায় ভুল ছবি আসলে জাতি ব্রিভান্ত হয়। অস্ত্র সহ আটক ভান্তের খবর প্রকাশ না করার পিছনে অবশ্যই কোন দূরভিসন্ধি রয়েছে যা দেশ ও জাতির জন্য হিতকর নয়। অবশ্যই কোন ভান্তে, ঈমাম বা ব্রাহ্মণ সন্ত্রাসী হতে পারে না। অথবা একজন সন্ত্রাসী কখনোই একজন ভান্তে, ঈমাম বা ব্রাহ্মণ হতে পারেনা। সন্ত্রাসীর কোন ধর্মীয় পরিচয় থাকতে পারেনা। তার পরিচয় সে শুধুই সন্ত্রাসী।  

নাইল্যাছড়ি হয়ে মাঝেরপাড়া ডাকাতি করতে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে স্থানীয়রা সংঘবদ্ধভাবে ধাওয়া দিলে ডাকাতদলকে রাতে বৌদ্ধধর্মীও ভান্তে কেন আশ্রয় দিয়েছিলেন? তিনি কি আশ্রয় দিতে বাধ্য হয়ে ছিলেন? পাহাড়ের যে কোন ঘটনায় সাধারণত দুটো দল তৈরী হয়, ক) পাহাড়ী  খ) বাঙালী। এখানে উল্লেখ যে, এ ঘটনায় পাহাড়ী ও বাঙালী মিলেই সন্ত্রাসীদের ধাওয়া দিয়ে ছিলেন। এমনকি পাহাড়ীরা সন্ত্রাসীদের ধরতে রাতে পাহারা পর্যন্ত বসায়। কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মীও ভান্তে তাদের আগলে রাখেন সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে। সচরাচর সামাজিক নিয়মে বা সাধারণ চোখে বৌদ্ধ বিহার গুলো যে কোন বিষয়ে সন্দেহের তালিকার বাইরে থাকে এবং এ সুযোগটায় বৌদ্ধ ধর্মীও ভান্তে কাজে লাগিয়েছেন। যা নিন্দনীয়। তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে যে, জেনে শুনে বুঝে এই ভান্তে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং অতি অবশ্যই তার নিজস্ব সার্থে।

সন্ত্রাসী ও বৌদ্ধ ভিক্ষু আটক হওয়ার পর তারা পুলিশকে সঠিক নাম-ঠিকানা না দিয়ে ভুল নাম ঠিকানা দিয়েছিলো। একজন ভান্তে কখনোই মিথ্যা বলবে না। তারমানে এ ভান্তে আসলেই বৌদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত নয় বরং সন্ত্রাসীদের মদদ দাতা মাত্র।

পুলিশ কেন এবং কাদের স্বার্থে বৌদ্ধ ভিক্ষুর নাম ঠিকানা গোপন করেছে তা ভীষণ চিন্তার বিষয়। “সন্ত্রাসী সন্ত্রাসীই, তার কোন জাত পাত ধর্ম থাকতে পারে না” পুলিশের জনপ্রিয় এই স্লোগান কে এখানে মিছে প্রমাণিত করা হয়ছে। অস্ত্রসহ বৌদ্ধ ভিক্ষু আটকের পর তার নাম ঠিকানা গোপন করার পিছনে ও রয়েছে অপরাধের প্রতি এক ধরনের পরোক্ষ সহযোগিতার আশ্বাস। যা পুলিশ করতে পারে না। “তথ্য ও নাম ঠিকানা দেওয়া নিষেধ” এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কে তা এখনই খুঁজে বের করা রাষ্ট্রের জন্য খুব জরুরী। কে জানে হয়তো এক কালো অধ্যায়ের খবর রাষ্ট্র আগাম জেনে যেত নয়তো এই ঘটনার ধামাচাপা বা সমাপ্তি এখানেই!   

সন্ত্রাসী এই বৌদ্ধ ভান্তে কে বাঁচাতে কে বা কারা তদবির করে ছিল? তাদের নিশ্চয় পুলিশ চেনে। কারা কারা ফোন করেছিল সে তথ্যও নিশ্চয় পুলিশের কাছে আছে। কে থানায় লোক পাঠিয়ে ছিল? সে কি কোন মাফিয়া? পুলিশের সাথে এসব মাফিয়ার কোন গোপন সম্পর্ক আছে কি! অস্ত্র চালান বা ডাকতির সাথে  এর কোন সম্পর্ক নেই তো! পাহাড়ী সন্ত্রাসী গুলোর সাথে সে বা তাদের সম্পর্ক আছে কি? তবে পাহাড়ে তারাই কি চাঁদাবাজী করে জনজীবন বিপন্ন করছে? নোংরা বিশ্রী আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদের প্রশ্রয় দাতা কি তারাই? রাষ্ট্রের স্বার্থে প্রশাসনের এ প্রশ্ন গুলোর উত্তর খোঁজা এখন খুব খুব জরুরী হয়ে পড়েছে। 

অস্ত্র সহ যদি কোন হুজুর বা ঈমাম অথবা কোন ব্রাহ্মণ গ্রেফতার হলে তখন ঘটনা কি একি রকম ঘটতো! নিঃসন্দেহে না। মিড়িয়া থেকে প্রশাসন সবাই তখন ঝাপিয়ে পড়তো। কে কার আগে গ্রেফতারর ক্রেডিট নিবে, পদন্নোতিতে আর একটা পয়েন্ট যোগ করতে হয়তো নির্লজ্জ প্রতিযোগিতা ও হতো। পাহাড়ে ওয়ালিউল্লাহর সেই “ধর্মের আগাছারা” বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতীক চক্রান্তে লিপ্ত, এর আগে সে খবর অনেক পত্রিকায় এসেছে। অনেক লেখায় ভান্তেদের কর্মকান্ড ও অর্থনৈতিক লেনদেনের হিসাব জাতিকে চমকে দিয়েছে। অথ্যাৎ, বৌদ্ধ ধর্মীও গুরু বা ভান্তের সন্ত্রাসবাদের ঘটনাকে আড়াল করতে বিষয়টি চেপে রাখা হয়েছে একথা নিশ্চিন্তে বলা চলে। 

এখানে একটি ঘটনা উল্লেখ করা প্রয়োজন। ২০১৯ এর প্রথম দিকে নানিয়ারচরে সেনাবাহিনী এক তথ্যের ভিত্তিতে ভান্তে বহনকারী একটি গাড়ি তল্লাশি করার সময় উত্তেজিত ভান্তেরা ফেসবুকে সে তল্লাশির লাইভ প্রচার করে যা দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। হুজুর বা ঈমাম অথবা কোন ব্রাহ্মণের বহনকারী গাড়ী যদি তল্লাশি করা যায় তবে ভান্তে বহনকারী গাড়ি তল্লাশি করতে সমস্যা কোথায়? তল্লাশি করার সময় সাময়িক অসুবিধার মুখে যদি দেশ ও জাতিকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা হয় তবে তাতে এত গাত্রদাহ কেন? সৎ পথে থাকলে তল্লাশি করার জন্য বিরক্ত হয়তো হতে হয় কিন্তু তা খুবই মামুলি ব্যাপার। বরং কোন বাহিনীর কোন রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম ফেইসবুকে লাইভ প্রচার করে সে বাহিনীকে অপমান করা হয় তা বুঝবার মতো জ্ঞাণ উনাদের ছিল। এই ফেইসবুক লাইভ যদি কোন হুজুরের দল করতো তবে ঠেঙিয়ে তাদের ঠ্যাং ভেঙ্গে দেয়া হতো। আফসোস প্রশাসন এখানে দ্বিমুখী নীতি গ্রহণ করেছে। 

কেবল পাহাড়ে নয় পৃথিবী জুড়েই সকল ধর্মের ধর্মীয় গুরুরা সন্মানিত। পাহাড়ের মানুষ ও তাদের বৌদ্ধ ধর্মীও গুরু বা ভান্তেদের সন্মান ও ভালোবাসে। তারা বিশ্বাস করে কোন ভান্তে কখনই জেনে শুনে বুঝে কোন সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে সমর্থন দিবে না, সন্ত্রাসীদের ভালোবাসবে না। এ কথা ঠিক যে, কয়েকজন হুজুরের কুকর্মের দায় যেমন সমগ্র হুজুরদের বিব্রত করে কিন্তু এর জন্য সকল হুজুর দায়ী নয় ঠিক তেমনি কয়েকজন ভান্তের কুকর্মের দায় যেমন সমগ্র ভান্তেদের বিব্রত করে ঠিক কিন্তু এর জন্য সকল ভান্তে দায়ী নয়। 

পাহাড়ে শান্তির সমর্থনে জাত-পাত-ধর্ম নির্বিশেষে সকলকে এক হয়ে কাজ করতে হবে যা প্রত্যেক নাগরিকের একান্তই মনের চাওয়া।

আনন্দধারা পাহাড়ে বিরাজ করুক অনন্তকাল।

 

আলোকিত রাঙামাটি