রাঙামাটি । শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ , ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১২:৫০, ১৪ জানুয়ারি ২০২১

ফেব্রুয়ারিতেই উন্নয়নশীল বাংলাদেশ

ফেব্রুয়ারিতেই উন্নয়নশীল বাংলাদেশ

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, এবার মুজিববর্ষেই অনন্য এক অর্জনের সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। আসছে ফেব্রুয়ারিতেই স্বল্পোন্নত দেশের তকমা ঘুচিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ঢুকবে বাংলাদেশ।

গতকাল সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, তিনটি সূচকেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি অগ্রগতি হওয়ায় সরকার আশা করছে ফেব্রæয়ারিতে দ্বিতীয় পর্যালোচনায় এ স্বীকৃতি পাবে বাংলাদেশ। বৈঠকে ৫ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এক ভার্চুয়াল সভায় ক্রয় প্রস্তাবগুলো অনুমোদন দেয়া হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। সভা শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ব্রিফিংয়ে বেশি দামে ভ্যাকসিন কেনা হচ্ছে কিনা, তা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী নিশ্চিত করেন, ভ্যাকসিনের দাম ইস্যুতে ঠকবে না বাংলাদেশ। এ সময় পর্যায়ক্রমে দেশের সব নাগরিককে করোনা ভ্যাকসিন দেয়া হবে বলেও জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসতে তিনটি সূচকে যে মান অর্জন করতে হয়, তার সব কটিতেই বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। যদিও, তিনটি সূচকের যেকোনও দুটিতে উত্তীর্ণ হলেই গ্র্যাজুয়েশন পাওয়া যায়।

বেধে দেয়া লক্ষ্য অনুযায়ী মাথাপিছু আয় ১ হাজার ২২২ ডলার, মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ পয়েন্ট বা বেশি এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুর সূচকে ৩২ পয়েন্ট বা কম। এর বিপরীতে সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ এগিয়ে আছে সবকটিতেই।

২০১৮ সালে প্রথম পর্যালোচনাতেও, বাংলাদেশ প্রতিটি সূচকেই অত্যন্ত ভালো অবস্থানে ছিল। ওই বছর থেকে পরবর্তী তিন বছর সূচকগুলো পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং বাংলাদেশের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকায় এ বছর বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে গ্র্যাজুয়েশন লাভ করবে। এরপর ২০২৪ সালে সূচকগুলোর অবস্থান ভালো সাপেক্ষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলাদেশ এই তালিকা থেকে বের হয়ে যাবে।

২০১৬ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ওই তালিকা থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা শুরুর জন্য পরিকল্পনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন। দুই বছর আলোচনার পরে ২০১৮ সালে জাতিসংঘ সন্তুষ্ট হয় এবং বাংলাদেশকে তিন বছরের জন্য পর্যবেক্ষণে রাখে, যা আগামী মাসে শেষ হবে।

এদিকে সভায় ৬০৭ কোটি ৭৪ লাখ ৫ হাজার ৫৬৮ টাকা ব্যয়ে ৫ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এটা ছিল নতুন বছরে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির দ্বিতীয় এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির দ্বিতীয় সভা।

অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদনের জন্য ১টি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ৫টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। ক্রয় কমিটির প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ১টি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ১টি, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ১টি, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১টি এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১টি প্রস্তাবনা ছিল, কমিটি সবগুলো ক্রয়প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ৫টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ৬০৭ কোটি ৭৪ লাখ ৫ হাজার ৫৬৮ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি থেকে ব্যয় হবে ৫৯৪ কোটি ৭১ লাখ ৮৩৪ টাকা এবং বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ ১৩ কোটি ৩ লাখ ৪ হাজার ৭৩৪ টাকা। পরে অনুমোদিত প্রস্তাবনাগুলো বিস্তরিত তথ্য জানাবেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. সালেহ। অতিরিক্ত সচিব ড. সালেহ বলেন, সভায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন খাদ্য অধিদফতর থেকে আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করার একটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। প্রতি মেট্রিক টন গমের দাম পড়বে ৩২৬ দশমিক ৯২ ডলার। সে হিসেবে মোট ব্যয় হবে ১৩৮ কোটি ৬১ লাখ ৪০ হাজার ৮০০ টাকা। সিঙ্গাপুর ভিত্তিক মেসার্স অ্যাগ্রোকর্প ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড এই গম সরবরাহ করবে।

তিনি বলেন, সভায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভগের আওতায় ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারী লিমিটেড থেকে জি টু জি ভিত্তিতে জানুয়ারি থেকে জুন ২০২১ সময়ের জন্য ৩০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানির একটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এজন্য ব্যয় হবে ১০৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব ড. সালেহ বলেন, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অধীন পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বগুড়া থেকে ‘পল্লী জনপদ নির্মাণ’ প্রকল্পের ৩টি সাইটের (রংপুর, বগুড়া এবং গোপালগঞ্জের) পূর্ত কাজের ভ‚তাপেক্ষ অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেড গাজীপুর। এজন্য ব্যয় হবে ১৫৪ কোটি ৬০ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

অতিরিক্ত সচিব ড. সালেহ বলেন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধীন ‘ন্যাশনাল হাউসহোল্ড ডাটাবেইজ (এনএইচডি)’ প্রকল্পে ক্রয়ের ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ১৩ কোটি ৩ লাখ ৪ হাজার ৭৩৪ টাকার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে ‘বাংলাদেশ সচিবালয়ে ২০তলা বিশিষ্ট নতুন অফিস ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ১৯৩ কোটি ৭৬ লাখ ৮০ হাজার ৩৪ টাকা। প্রকল্পটি যৌথভাবে বস্তবায়ন করবে দি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ও ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এবং বঙ্গ বিল্ডার্স লিমিটেড।

এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতায় গ্রীসের এথেন্সে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেন্টিননিনাল স্কুল’ স্থাপনের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

আলোকিত রাঙামাটি