রাঙামাটি । বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪ , ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাঘাইছড়ি প্রতিনিধিঃ-

প্রকাশিত: ১০:১৬, ৭ জানুয়ারি ২০২০

বাঘাইছড়িতে দূর্যোগসহনীয় ঘর নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

বাঘাইছড়িতে দূর্যোগসহনীয় ঘর নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দূর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ কর্মসূচী প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। 

তালিকা তৈরিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রনোয়নকৃত তালিকা বাদ দিয়ে সরকারী নীতিমালার বাহিরে গিয়ে অনেক সাবলম্বী পরিবার ঘর পেয়েছে পৌরসভা ও বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ ঘুরে দেখা যায় এক বাবার ৪ সন্তান ঘর পেলেও ঘর পায়নি প্রকৃত গৃহহীন পরিবার। এছাড়া ঘর নির্মানেও প্রচুর অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে। এসব ঘরে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যাবস্থা, সোলার সিষ্টেম, বজ্রপাত নিরোধক ব্যাবস্থা থাকার কথা থাকলেও সেগুলো নেই। 

এ বিষয়ে চেয়ারম্যানগণ লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে। একই সাথে বাঘাইছড়ি প্রেস ক্লাবে উপস্থিত হয়ে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ জানিয়ে প্রতিকার চেয়েছেন অনেক জন প্রতিনিধি। 

অভিযোগ প্রাপ্তির আলোকে ৩ জানুয়ারী ২০২০ সরেজমিনে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিদর্শন করে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যায়। উপজেলার আমতলী ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায় ইউনিয়নে এবার ৪ টি ঘর প্রদান করা হয়েছে যারা ঘর পেয়েছেন তাদের সকলেই আর্থিক ভাবে সাবলম্বী এদের মধ্যে দুজনের রয়েছে বিশালাকার বাড়ী। একজনের সেমিপাকা ১০ কক্ষ রঙ্গিন টিনের ঘর এদের সকলের নামেই সরকারী ভাবে ২.৫ একর জায়গা বরাদ্দ সহ প্রতি ৩ মাসে ২৫০ কেজি করে চাউল বরাদ্দ এবং সরকারী ভাতা ভোগী। একজনের রয়েছে চট্টগাম রেলওয়ে কলোনীতে ৬ টি বাড়ী যা তিনি মাসিক ২ হাজার টাকা করে ভাড়া দিয়ে ১২ হাজার টাকা আয় করেন। বেশীর ভাগ সময় থাকেন চট্টগ্রাম।

অন্যদিকে স্বামীহীন বিধবা নারী সকিনা বিবি, স্বামী- মৃত সফিউল আলম সন্তানাদি নিয়ে থাকেন ভাঙ্গা কুড়ে ঘরে মানুষের বাড়িতে কাজ করে কোন রকম জীবন জিবীকা নির্বাহ করেন। দীর্ঘদিন ধরে ঘরের জন্য আবেদন করেও ঘর না পেয়ে হতাশ। 

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ওয়ার্ড মেম্বারসহ স্থানীয়দের মধ্যে রয়েছে চরম অসন্তোষ। তারা বলছেন যারা ঘর পেয়েছেন তারা সরকারী নীতিমালার আলোকে কেওই ঘর পাওয়ার যোগ্য নয়। 

আমতলী ইউপির ৮ নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ ছোবাহান বলেন, আমার এলাকায় দুইজন ঘর পেয়েছেন তারা ঘর পাওয়ার যোগ্য নয়। তারা কিভাবে ঘর পেয়েছেন আমরা তা অবগত নই আমাদের প্রেরণ করা তালিকায়ও তাদের নাম নেই। আমাদের না জানিয়ে অসৎ উপায় অবলম্বন করে তারা সরাসরি ইউএনও অফিস থেকে ঘর পেয়েছেন। এখানে চেয়ারম্যান সহ আমাদের হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে। আমরা এর সুষ্ঠ তদন্ত দাবী করছি। 

আমতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি মোঃ রুবেল আলম অভিযোগ করেন ঘর নির্মানের অনিয়মের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ওয়ার্ড মেম্বার, পিআইও কিছুই জানেনা তাহলে তারা ঘর গুলো কিভাবে পেলো। আমি উপজেলা চেয়ারম্যান সহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি সঠিক তদন্ত করে সঠিক লোকদের দেয়ার জন্য।

অন্যদিকে ইউপি চেয়ারম্যান রাশেল চৌধুরী বলেন, আমার ইউনিয়নে যে চারজন ঘর পেয়েছে তারা মোটেও ঘর পাওয়ার যোগ্য নয় তাদের ঘর সহায় সম্বল সবকিছু আছে। আমরা যে তালিকা দিয়েছি সে তালিকায়ও তাদের নাম নেই। এখনে সরকারী কোন নিয়মনীতি মানা হয়নি সম্পূর্ণ অনৈতিক ভাবে এই চারটি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আমি ধারনা করছি মোটা অংকের অর্থনৈতিক লেনদেন হয়েছে। আমি সম্মানিত জেলা প্রসাশকের দৃষ্টি আকর্ষন করছি বিষয়টি যাহাতে তিনি তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেন। 

এদিকে উপজেলার মারিশ্যা ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায় মৃত সিরাজুল ইসলাম, মাতা মরিয়ম বেগম নামে একই পরিবারে চার জন সদস্য ঘর পেয়েছেন এবং পাশাপাশি একই উঠানে দুটি ঘর তৈরি করেছেন। উক্ত ঘর পরিদর্শনে গিয়ে দেখাযায় নতুন ঘরের পাশেই রয়েছে টিনসেড আরো দুইটি ঘর সেই ঘর দুটিও ভাড়া দেয়া হয়েছে দুই পরিবারের নিকট। 

ভাড়াটিয়া রোকেয়া বেগম স্বামী শহিদুল ইসলাম বলেন, বাড়ীর মালিক থাকেন তাদের আরেক বাড়িতে তারা কিভাবে বাড়িগুলো পেয়েছেন তিনি কিছু বলতে পারেন না। বাড়ির মালিকের খুঁজে সেই বাড়িতে গিয়েও তাদের কাওকে পাওয়া যায় নি। 

এদিকে পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ হোসেন অভিযোগ করেন ঘর আদান প্রদানের ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ পৌরসভার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করেনি। উপজেলা চেয়ারম্যান মেয়র ও কিছু জানেনা এভাবে হলেতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার কোন বহিপ্রকাশ ঘটবে না। আমরা সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত অসহায় মানুষ যাহাতে ঘর গুলো পায়, তার জোরদাবী জানাচ্ছি। 

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আহসান হাবিব জিতু সরকারী কাজে দেশের বাহিরে থাকায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

এদিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিসে গিয়ে না পেয়ে মোবাইল ফোনে বার বার কল করেও রিসিভ না করায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবু কাইয়ুম কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি একান্তই ইউএনও এবং পিআইও এক্তিয়ার উল্লেখ করে উপজেলা চেয়ারম্যান এর সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। উপজেলা চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমার ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি। 

উল্লেখ্য যে, প্রায় ১ কোটি ২৮ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা ব্যায়ে বাঘাইছড়িতে ৪৬ টি ঘর বরাদ্দ দিয়েছে সরকার ২২ টির কাজ শেষ হলেও চলছে ২৪ টির কাজ।

আলোকিত রাঙামাটি

জনপ্রিয়