রাঙামাটি । শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ , ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ২৫ নভেম্বর ২০২০

বান্দরবানের চা যাবে বিদেশে

বান্দরবানের চা যাবে বিদেশে

বান্দরবানের চা প্রক্রিয়াজাত কারখানা


আম, জাম, লিচু, কমলার পাশাপাশি বান্দরবানের পাহাড়ে দীর্ঘদিন ধরে চাষ হচ্ছে চা। উৎপাদনের পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত হচ্ছে এখানেই। বাড়তি আয়ের উৎস পেয়ে খুশি স্থানীয় চা চাষিরা। তাদের আশা, একদিন বান্দরবানের চা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে যাবে।

২০০৪ সাল থেকে চা বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রকল্পের আওতায় চা চাষ শুরু হয় বান্দরবান সদর, রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে। চা চাষে নিয়োজিত আছেন ৩২৬ জন নিবন্ধিত চাষি।

এখানে উৎপাদিত সবুজ চা পাতা প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাত করতে নানা সমস্যা হতো। ২০১৯ সালে সে সমস্যা সমাধানে বান্দরবানের সুয়ালক ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়ায় প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয়েছে চা প্রক্রিয়াজাত কারখানা। চাষিরা এখন আগের চেয়ে চা চাষে বেশি উৎসাহী হচ্ছে।

সুয়ালক এলাকার চা চাষি মো. আব্দুর রশীদ বলেন, ২০১০ সাল থেকে আমি চা চাষ শুরু করি। চাষ শুরু করে প্রথমে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখন চৌধুরীপাড়ায় নতুন চা কারখানা হওয়ায় আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। এখন আমাদের চা পাতা নষ্ট হয় না। কারখানায়ই বিক্রি করা যায়।

রোয়াংছড়ির লাপ্পাইমুখ এলাকার চা চাষি মেম্যানু মার্মা বলেন, চা বোর্ডের বান্দরবান আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে চা চাষ শুরু করেছি। পরবর্তীতে আমাকে দেখে অনেকেই চা চাষে আগ্রহী হয়েছে।

সুয়ালক এলাকার মো. ইয়াকুব আলী সিকদার বলেন, বান্দরবানে চা চাষ করে আমরা আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই। একদিন বান্দরবানের চা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে যাবে, এমনটাই আশা আমাদের।

 

বান্দরবানের চা প্রক্রিয়াজাত কারখানা

 

চা বোর্ডের বান্দরবান আঞ্চলিক কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বান্দরবানে শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৯ লাখ ৫০ হাজার চা চারা উৎপাদন করা হয়েছে। বিনামূল্যে ক্ষুদ্র চাষিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে সাড়ে ৫ লাখ চারা। নতুন চা প্রক্রিয়াজাত কারখানায় বান্দরবানের চা গুণে-মানে উৎকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন কর্মকর্তারা। এ কারখানা পুরো চালু হলে বান্দরবানের চা বিদেশেও রফতানি হবে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের বান্দরবান আঞ্চলিক কার্যালয়ের সিনিয়র টি মেকার মো. আমির আলী বলেন, বান্দরবানে চা ফ্যাক্টরি তৈরি হওয়ায় চাষিরা নতুনভাবে চা চাষে আগ্রহ পাচ্ছে। এখন পার্বত্য এলাকার চা চাষিরা আর সবুজ চা পাতা বিক্রি ও প্রক্রিয়াজাত করা নিয়ে ভোগান্তিতে পড়বেন না।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের বান্দরবান আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক সুমন সিকদার বলেন, দেশে চা উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করে রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে বৃহদায়তন চা বাগানগুলোর পাশাপাশি ক্ষুদ্র বাগানে চা চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে বান্দরবানে প্রকল্পের আওতায় ক্ষুদ্র চা বাগান মালিকদের চা পাতার ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায় চা প্রক্রিয়াজাত কারখানা স্থাপন করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, কারখানাটি লাভজনক অবস্থায় যেতে বান্দরবান থেকে যে পরিমাণ সবুজ চা পাতা প্রয়োজন, তা পেতে আনুমানিক ৩-৪ বছর সময় লাগবে। ভবিষ্যতে বাগানগুলো থেকে সবুজ পাতার উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে কারখানাটি লাভজনক পর্যায়ে চলে যাবে। বান্দরবানের মাটি উন্নতজাতের চা চাষের উপযোগী হওয়ায় এখান থেকে সেরা মানের চা পাওয়া সম্ভব, যা একটি স্বতন্ত্র ব্র্যান্ড হিসেবে বিদেশে রফতানি করা যাবে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলা চা চাষের জন্য উপযোগী। চা চাষিরা বাগানে পর্যাপ্ত সময় তার শ্রম ব্যয় করলে বাগান থেকে প্রচুর সবুজ পাতা উৎপাদন হবে। এসব পাতা দ্রুত প্রক্রিয়াজাত করতে বান্দরবানের ফ্যাক্টরি সার্বক্ষণিক খোলা রাখা হবে। একই সঙ্গে চাষিদের জীবনমান উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ক্ষুদ্রায়তন চা চাষ প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে বান্দরবানে ৮৭ দশমিক ৫০ হেক্টর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। এতে প্রতি মাসে প্রায় পাঁচ হাজার কেজি সবুজ চা পাতা পাওয়া যাচ্ছে। আগামীতে চা বাগান ও চাষির সংখ্যা বাড়ানো হবে। উৎপাদন বাড়লে বান্দরবানের চা দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানিও করা যাবে।

আলোকিত রাঙামাটি