রাঙামাটি । শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ , ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১২:২২, ১৩ অক্টোবর ২০২০

মেট্রোরেল যাচ্ছে কমলাপুর

মেট্রোরেল যাচ্ছে কমলাপুর

মেট্রোরেল যাচ্ছে কমলাপুর। প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে মেট্রোরেল মতিঝিলের পরিবর্তে কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এতে করে ট্রেনে যাতায়াত করা বিপুল সংখ্যক যাত্রী উপকৃত হবে। 

সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিপুলসংখ্যক যাত্রী কমলাপুরে যাতায়াত করেন। সেখান থেকে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বাস বা সিএনজি অটোরিকশাই প্রধান ভরসা যাত্রীদের, যা অনেক সময়ই প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকে। তবে কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের ফলে ঢাকায় আসা ও ঢাকা ছেড়ে যাওয়া রেলের যাত্রীরা মেট্রোরেল ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। আবার মেট্রোরেলের উপযোগিতাও বৃদ্ধি পাবে।

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল (এমআরটি লাইন-৬)। গত বছর অক্টোবরে মেট্রোরেলটি মতিঝিলের পরিবর্তে কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠকে বসে সড়ক পরিবহন ও রেল মন্ত্রণালয়। তাতে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত দেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব এবং এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক।

সূত্রমতে, দুই ভাগে চলছে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ। এর মধ্যে আগস্ট পর্যন্ত উত্তরা-আগারগাঁও অংশের অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৭৪ শতাংশ। আর আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের অগ্রগতি প্রায় ৪৮ শতাংশ। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর মেট্রোরেলের লাইনটি কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এ জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইও করা হয়েছে।

বর্তমানে মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ কিলোমিটার। আর মতিঝিল-কমলাপুরের অংশটির দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার। এতে মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ২১ কিলোমিটারের কিছু বেশি। এছাড়া উড়ালপথে (এলিভেটেড) নির্মাণাধীন এ মেট্রোরেলে ১৬টি স্টেশন ছিল। তবে কমলাপুর যুক্ত হওয়ার এ সংখ্যা দাঁড়াবে ১৭তে। যদিও বর্ধিত অংশ যেন মূল মেট্রোরেল র্নির্মাণ পরিকল্পনায় বিঘ্ন না ঘটায় সে জন্য কাজ করছে ডিএমটিসিএল।

প্রকল্প সূত্র জানায়, মেট্রোরেল কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সম্প্রতি এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক জানান, প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশের ভিত্তিতে কমলাপুর প্রান্তে মেট্রোরেলের স্টেশন নির্মাণে সোশ্যাল সার্ভের জন্য জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থাকে (জাইকা) অনুরোধ করা হয়েছে। এ সময় তিনি প্রস্তাবিত স্টেশনের অবস্থান ও এ রুটকে সচল করার জন্য প্রস্তাবিত স্টেশনের শেষ প্রান্তে ‘সিজার ক্রসওভার’ নির্মাণের আবশ্যিকতা সম্পর্কে ড্রয়িং ও স্যাটেলাইট ইমেইজসহ পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে সভায় বিস্তারিত অবহিত করেন। তিনি জানান, সরকার অনুমোদিত সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) ২০১৫-২০৩৫-তে এমআরটি লাইন-৬ কমলাপুর পর্যন্ত স¤প্রসারণের সুপারিশ রয়েছে। আবার ২০১৮ সালে এমআরটি লাইন-১ এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়েও এমআরটি লাইন-৬ কমলাপুর পর্যন্ত স¤প্রসারণের সুপারিশ করা হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর মেট্রোরেল কমলাপুর পর্যন্ত স¤প্রসারণের জন্য সোশ্যাল সার্ভে শুরু করা হয়েছে। বর্তমানে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। স্টেশনের অবস্থান চূড়ান্ত হওয়ার পর এক মাসের মধ্যে সোশ্যাল সার্ভে সম্পন্ন করা হবে।

সভায় আরও জানানো হয়, কমলাপুর এলাকায় মেট্রোরেলের স্টেশন নির্মাণের জন্য ডিএমটিসিএল ও রেলওয়ের কারিগরি দল গত ১৮ আগস্ট এক সভা করে। এতে রেলওয়ের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হলো-কমলাপুর স্টেশন এলাকায় এমআরটি-৬-এর স্টেশন অপশন-১ (পাশাপাশি) অনুযায়ী স্টেশন এলাকায় ও সংলগ্ন সার্কুলার সড়ক সমন্বয়ে নির্মাণ করা যায়। তবে এমআরটি লাইন-৬ স্টেশনের শেষ প্রান্ত কমলাপুর স্টেশনের নারায়ণগঞ্জ প্ল্যাটফর্মের প্রবেশ সড়কের সীমানার মসজিদ সংলগ্ন প্রান্তে সীমাবদ্ধ রাখার শর্ত আরোপ করা হয়। এছাড়া এমআরটি লাইন-১, লাইন-২ ও লাইন-৪-এর স্টেশনগুলো কমলাপুর মাল্টিমোডাল হাবের ল্যান্ডস্কেপ প্ল্যানের গ্রিনজোনের মধ্যে পাতালে (মাটির নিচে) নির্মাণ করা যায়। 

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বিষয়ে বৈঠকে জানান, অপশন-১ অনুযায়ী কমলাপুরে এমআরটি লাইন-৬-এর স্টেশনের বর্তমান অবস্থান কার্ভ সেকশনের শেষ প্রান্ত থেকে শুরু হয়েছে। এতে স্টেশনের আগে ‘সিজার ক্রসওভার’ নির্মাণ করা সম্ভব নয়। সুষ্ঠুভাবে ট্রেন পরিচালনার জন্য স্টেশনের পরে ‘সিজার ক্রসওভার’ নির্মাণ করা অপরিহার্য।

২০১২ সালের ডিসেম্বরে অনুমোদন করা মেট্রোরেল প্রকল্প। আর বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন শেষে এর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের জুনে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা করছে সরকার। সে অনুযায়ী এগিয়ে নেওয়া হচ্ছিল নির্মাণকাজ। তবে করোনার কারণে এ প্রক্রিয়া অনেকটাই ঝুলে গেছে।

এদিকে মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি সাত লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকা ঋণ দিচ্ছে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাক। বাকি পাঁচ হাজার ৩৯০ কেটি ৪৮ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। তবে মেট্রোরেল কমলাপুর পর্যন্ত স¤প্রসারণ করায় এ ব্যয় বেড়ে যাবে। এছাড়া করোনার কারণে নির্মাণকাজ বিলম্ব হওয়াও ব্যয় বাড়বে।

সূত্রঃ দৈনিক ইনকিলাব

আলোকিত রাঙামাটি