রাঙামাটি । বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ , ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ১৭ মার্চ ২০২০

যে ঘর থেকে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি শুরু

যে ঘর থেকে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি শুরু

এই বাড়িতেই জন্ম হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বর্তমানে বাড়িটিতেই করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স


কবি কামাল চৌধুরী বলেছিলেন, বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবিতা হচ্ছে- ‘আর দাবায় রাখতে পারবা না’। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে অনেকে আখ্যা দিয়েছেন কবিতা হিসেবে। গবেষক রঞ্জনা বিশ্বাস লিখেছেন, ‘স্বাধীনতার ভাষা গোপালগঞ্জের ভাষা’। তিনি দেখিয়েছেন, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটিতে কিভাবে গোপালগঞ্জের ভাষা ব্যবহার হয়েছে। আরো অনেক কবি-সাহিত্যিক কথাগুলো অকপটে স্বীকার করেন।

এভাবেই আসলে ইতিহাসের জন্ম হয়। একটি সাধারণ আঞ্চলিক ভাষাও ইতিহাসের অংশ হয়ে যায়। মূল্যবান কিছুর স্পর্শে মহা-মূল্যবান হয়ে যায় সাধারণ অনেক কিছুই।

যেমনভাবে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জন্ম দিয়ে অমরত্ব পেয়েছে টুঙ্গীপাড়ার শেখ বাড়ি। ওই বাড়িতেই বঙ্গবন্ধুর জন্ম, বেড়ে ওঠা, রাজনীতির শুরু। ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা, শস্য শ্যামলা রূপসী বাংলার রূপ বঙ্গবন্ধু দেখেছেন ওই বাড়িতে থেকেই। বেড়ে উঠেছেন পারিবারিক আবহে, আবহমান বাংলার আলো-বাতাসের সঙ্গে। প্রকৃতি আর মানুষের প্রতি তার মমত্ববোধ সেই ছোটবেলা থেকেই।

সেই বাড়িটির খোঁজে ১৫ মার্চ ভোরে ছুটে চলা। কথা হয় শেখ পরিবারের অনেকের সঙ্গে। তারা জানান, বঙ্গবন্ধু’র শৈশব-কৈশোর যে বাড়িতে কেটেছে, যে ঘর থেকে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি শুরু, সেই বাড়িটি এখন জাতির পিতার সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অনেক ইতিহাসের স্বাক্ষীও এ বাড়িটি। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর হেলিকপ্টারে করে এনে দাফন করা হয় এই বাড়িতেই। যেখানে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর বাবা-মায়ের কবর। ৭৫ পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন অবহেলিত থাকে বাড়িটি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বাড়িটি ঘিরে সমাধি সৌধ নির্মাণ করা হয়।

শৈশবের দুরন্ত মুজিব ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামের শেখ লুৎফর রহমান ও শায়েরা খাতুনের ঘরে জন্ম নেন। বাবা-মা আদর করে ডাকতেন খোকা। সেই খোকাই হলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। ১৯২৭ সালে তিনি গিমাডাঙ্গা স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে লেখাপড়া করেন তিন বছর। এরপর কৈশোরে তিনি গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর থাকতেন। বাড়ি আসলে সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিতেন।

গ্রামের মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ছুঁয়ে যেতো কিশোর মুজিবের মন। জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও প্রজা নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাই সেই বয়সেই রুখে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।

টুঙ্গিপাড়ার শেখ বাড়ির শেখ বোরহান উদ্দিন জানান, প্রায় সাড়ে ৩শ’ বছর আগে বঙ্গবন্ধুর পূর্বপুরুষ জমিদার শেখ কুদরতউল্লা টুঙ্গিপাড়ায় সেগুন কাঠের তৈরি দৃষ্টিনন্দন কারুকাজের ১২টি পিলারের একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। এ বাড়িটি তখন এ অঞ্চলের মধ্যে অনন্য স্থাপত্যশিল্প হিসেবে পরিগণিত হতো। এ অঞ্চলে আগত মানুষ বাড়িটির নির্মাণশৈলী দেখে মুগ্ধ হতেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব থেকে শুরু করে জীবনের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে এই বাড়ির সঙ্গে। বঙ্গবন্ধু’র আদি পূর্বপুরুষেরা জমিদার ছিলেন। বঙ্গবন্ধু যে বাড়িতে জন্মেছেন, সেটি এখন সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স। যদিও পুরনো সেই বাড়ি-ঘর নেই। সেখানে এখন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তবে, বঙ্গবন্ধুর শৈশব-কৈশোর ও রাজনীতি সবই এই বাড়ি ঘিরে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় আসলে এই বাড়িতে অবস্থান করেন।

বোরহান উদ্দিন বলেন, এক সময়ের বাড়ির আঙিনা, গোয়াল-ঘর, মাঠ এখন জাতির পিতার সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স। প্রায় ৩৮ একর জমি উপরে গড়ে তোলা হয়েছে এই কমপ্লেক্স। বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান এখন যেমন দেখা যাচ্ছে, তখন এমন ছিল না। বঙ্গবন্ধুর বাবার অনেক জমি-জমা ছিল। এই সমাধি কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে তখন ছিল বড় একটি শাল কাঠের টিনের চৌচালা ঘর। ওই টিনের ঘরেই বঙ্গবন্ধু’র জন্ম। বঙ্গবন্ধু’র অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিনি এটি লিখে গেছেন। এছাড়া এখানে কাচারি ঘর, গোয়াল ঘর, খড়ের পালা ও বড় উঠান ছিল।

শেখ পরিবারের নিকট আত্মীয় শেখ আহম্মেদ হোসেন মির্জা বলেন, শৈশব থেকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম করতে শিখেছেন বলেই জীবনে কোনো অপশক্তির কাছে মাথানত করেননি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। মানুষ বিপদে পড়লে ঝাঁপিয়ে পড়তেন বঙ্গবন্ধু। কেউ বিপন্ন হলে তার পাশে দাঁড়াতে বলতেন সর্বদা। কেউ অভাব অনটনে পড়লে নিজের বাড়ির গোলার সব ধানও বিক্রি করে সাহায্য করতেন। জাতির পিতার রাজনীতি শুরু এই বাড়ি থেকেই। বঙ্গবন্ধু সব সময় বাবা-মায়ের দোয়া নিয়ে চলতেন। রাজনীতি করতে পরিবারের সহযোগীতা পেতেন। এই সমাধি কমপ্লেক্স দেখে হয়তো বঙ্গবন্ধু’র পুরনো বাড়ির ঘরের স্মৃতি বোঝার উপায় নেই। তবে, এই মাটিরই সন্তান শেখ মুজিব। এখানেই বেড়ে উঠেছেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, জাতির পিতার স্মৃতি বিজড়িত হিজলতলা, খেলার মাঠ, বড় তালাব, ছোট তালাব, খেয়াঘাটসহ নানা স্থান এখন সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

পাশবর্তী শ্রীরামকান্দি গ্রামের শতবর্ষ পার করা আব্দুল হামিদ জানান, বঙ্গবন্ধু তাকে বড় ভাই ডাকতেন। তিনি ছিলেন শেখ মুজিবের থেকে প্রায় ১০ বছরের বড়। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই মিশুক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তার প্রিয় খেলা ছিল ফুটবল। খেলতেন হাডুডুও। শিশু শেখ মুজিবের শৈশবের পুরোটাই কেটেছে মেঠো পথের ধুলোবালি মেখে আর বর্ষার কাদা পানিতে ভিজে। সামনে আসা যেকোন সংকট তিনি মোকাবেলা করতেন নিজের বুদ্ধিতে, শক্ত হাতে। প্রতিপক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হলে তিনি মিটমাট করতেন দায়িত্ব নিয়ে।

তিনি মনে করেন, বঙ্গবন্ধুর মাঝে সৃষ্টিকর্তার বিশেষ দান ছিল, তা না হলে এই অজো পাড়া গাঁ থেকে এত বড় নেতা হওয়ার কথা নয়।

জাতির পিতার সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সের সহকারি কিউরেটর মো: নুরুল ইসলাম বলেন, জাতির পিতা জন্মভিটার স্মৃতি সংরক্ষণে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ধাপে ধাপে সকল উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

আলোকিত রাঙামাটি

জনপ্রিয়