রাঙামাটি । শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ , ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১৭:৩৯, ১৬ এপ্রিল ২০২০

যে নারীর হাতে প্রথম সর্বনাশা কারোনাভাইরাস আবিষ্কার

যে নারীর হাতে প্রথম সর্বনাশা কারোনাভাইরাস আবিষ্কার

করোনাভাইরাসের আবিষ্কারক ড. জন আলমেইডা।


বিশ্বের ২০০ শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সর্বশক্তি সহকারে তাণ্ডব চালাচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তি যমের সামনে থেকে হয়তো পৃথিবীতে ফিরে আসছেন বা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে বাধ্য হচ্ছেন। ভাইরাসটি এতোটাই ভয়াবহ যে, বিশ্বের কয়েকটি পরিবারকে পুরোপুরি সর্বনাশ করে ছেড়েছে। তছনছ হচ্ছে লাখো পরিবার। ১৯৬৪ সালে সেই সর্বনাশা কোভিড-১৯-এর মূল করোনাভাইরাসকে লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালের গবেষণায় প্রথম আবিষ্কার করেন স্কটল্যান্ডের বাসচালকের কন্যা জুন আলমেইডা।

চিকিৎসা বিষয়ক লেখক জর্জ উইন্টার বিবিসি রেডিও স্কটল্যান্ডকে জানান, ডক্টর টাইরেলের নেতৃত্বে এক দল গবেষক নাক ধোয়ার ওপর গবেষণায় স্বেচ্ছাসেবীদের মাঝে বেশ কয়েকটি সর্দি-কাশির ভাইরাস বৃদ্ধি করতে পেরেছিলেন। তবে সবগুলো নয়। এর মধ্যে বিশেষ ভাইরাস নজরে আসে। তার নামকরণ করা হয় বি-৮১৪।

সাধারণ সর্দি-কাশির কয়েকটি লক্ষণ স্বেচ্ছাসেবীদের মাঝে তৈরি করলেও নিয়মিত কোষ ভেতরে বাড়তে পারেনি বলে লক্ষ্য করেন গবেষকরা। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবীদের প্রত্যঙ্গের মধ্যে কিছু একটা বেড়েছিল। এ নিয়ে অবাক ড.  টাইরেল বৈদ্যুতিক মাইক্রোস্কোপ দিয়ে পরীক্ষা করে দেখার প্রয়োজন বোধ করেন। সেসব নমুনা জুন আলমেইডার কাছে পাঠান তিনি।  কারণ নমুনার মধ্যে তিনি ভাইরাসের কণা  দেখতে পেয়েছিলেন। তার ভাষ্য, ওই ভাইরাস ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মতো মনে হলেও তা ছিল না। পরবর্তীতে ওই ভাইরাসকে জুন আলমেইডা আবিষ্কার করেছিলেন। যা বিশ্বে করোনাভাইরাস নামে পরিচিতি পায়।

এর আগে ড. আলমেইডা ইঁদুরের মধ্যে হেপাটাইটিস ও মুরগির সংক্রামক ব্রঙ্কাইটিস নিয়ে গবেষণা করেন। ওই গুলোর মধ্যে এ ধরনের কণা দেখতে পেয়েছিলেন তিনি। প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও চিত্রগুলো বাজে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের কণা উল্লেখ করে তার গবেষণা নথিটি বাতিল করে পিয়ার-রিভিউড জার্নাল।

১৯৬৫ সালে বি-৮১৪ আবিষ্কারের বিষয়টি ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত হয়। ড. আলমেইডার দেখা চিত্র দুই বছর পর জেনারেল ভাইরোলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়।

উইন্টার জানান, ড. টাইরেল ও ড. আলমেইডার পাশাপাশি সেন্ট থমাসের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক টনি ওয়াটারসন মিলে ওই ভাইরাসকে করোনাভাইরাস নামকরণ করেন। কারণ ভাইরাসটির চারপাশে অনেকটা মুকুট ছিল।

১৯৩০ সালে জন্মগ্রহণ করা ভাইরোলজিস্ট ও গ্লাসগোর আলমেইডা আলেজান্দ্রা পার্কের কাছাকাছি টেনেমেন্ট এলাকায় বড় হন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেয়া দেন। গ্লাসগো রয়্যাল ইনফার্মারিতে হিস্টোপ্যাথলজিতে গবেষণাগার কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। পেশাগত উন্নতির জন্য লন্ডনে পাড়ি জমিয়েছিলেন আলমেইডা। সেখানে ১৯৫৪ সালে ভেনেজুয়েলান এক শিল্পীকে বিয়ে করেন তিনি। পরে লন্ডনের পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিকেল স্কুলে কাজ করায় তাকে ডক্টরেট সম্মানে ভূষিত করা হয়।

তবে বিশেষ কারণে আলমেইডা ও তার স্বামী- মেয়েসহ কানাডার টরেন্টোতে পাড়ি জমান। সেখানে অন্টারিও ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে একটি ইলেকট্রনিক মাইক্রোস্কোপ নিয়ে তার অসামান্য দক্ষতার বহিঃপ্রকাশ ঘটান ড. আলমেইডা।  তার আবিষ্কার করা একটি পদ্ধতি অ্যান্টিবডি সংহত করার মাধ্যমে ভাইরাস পরিষ্কারভাবে দেখা সম্ভবের সূচনা হয়।

উইন্টার আরো জানান, আলমেইডার এমন প্রতিভা যুক্তরাজ্যের মনোযোগ কেড়েছিল। ১৯৬৪ সালে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে সেন্ট থমাস হাসপাতাল মেডিকেল কলেজে কাজ করতে আনা হয় তাকে। ওই হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

ওই সময় ড. ডেভিড টাইরেলের সঙ্গে উল্টশ্যায়ারের সালসবিউরিতে সাধারণ ঠান্ডা নিয়ে গবেষণা করেছিলেন আলমেইডা। খ্যাতিমান ভাইরোলজিস্ট আলমেইডা ওয়েলকাম ইনস্টিটিউটে পেশাজীবন শেষ করেন। ভাইরাস ইমেজিংয়ের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটির স্বত্ত্বাধিকার তিনি। আজকের কোভিড-১৯ তার শনাক্ত করা করোনাভাইরাসের একটি প্রজাতি।

আলমেইডা ভাইরোলজিস্টের পেশা ছেড়ে দিলেও ইয়োগা প্রশিক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৮০-এর দশকেএইচআইভি ভাইরাসের ইমেজিংয়ের ক্ষেত্রে একজন পরামর্শকও ছিলেন তিনি। ২০০৭ সালে ৭৭ বছর তার মৃত্যু হয়।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০ লাখ ৯৪ হাজার ৮৯৭ জন। এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন এক লাখ ৩৫ হাজার ৫৫৯ জন। আর সুস্থ হয়েছেন পাঁচ লাখ ২০ হাজার ৯৪৬ জন।

আলোকিত রাঙামাটি

জনপ্রিয়