রক্তে-রক্তে পার্থক্য নেই
আমার শহরের শোকার্ত মানুষগুলোর মুখ বারবার মনে পড়ে। এক একটি দূর্যোগ হাজার হাজার কাহিনীর জন্মদেয়। আর আমি সে সব হাভাতের মতো গিলতে থাকি। তেমনই একটি কাহিনী নিয়ে আমার এ লেখা।
.......................................
ভা….ই, আমার বউকে বাঁচান। ওর পেটে বাচ্চা … যে করে হউক ও কে বাঁচান..
আরে আপনারইতো অবস্থা খুব খারাপ, আগে আপনাকে বের করি
আপনার তো এখনো আছে প্রাণ
না ভাই আমার সময় শেষ, আমাদের স্বপ্নকে বাঁচান…. আল্লার দোহায়
আমার বউকে বাঁচান।
এটুকু বলে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে চাইথুই মারমা…
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি তারপর কি হলো…?
একটু দূরেই বেড়া আর টিন সরাতেই
দেখলাম এক মহিলা নিথর হয়ে আছে কাঁদা-মাটি-জলে
আমি পাহাড়ী, ও বাঙালী, তার উপর মহিলা, লোকে যদি কিছু বলে!
কি করবো ভেবে না পায়, শুধু থেকে থেকে মেয়েটির গোঙানোর শব্দ শুনতে পায়
মনে হয় অনন্তকাল ধরে এ শব্দ মাথার মধ্যে ঘুরে ….।
তারপর সাহস করে ডাকলাম মংসাইকে
বললাম যা আছে কপালে নিয়ে চল হাসপাতালে
বাঁশের মধ্যে বস্তা বেঁধে তারমধ্যে তাকে নিয়ে
পাহাড়ী পথ আর ধ্বসে যাওয়া পিচ্ছিল দূর্গম রাস্তা ধরে
আট কিলোমিটার কাঁধে করে
নিয়ে এলাম হাসপাতালে
ডাক্তাররা বাঁচিয়ে দিলো পেটের বাচ্চাসহ মহিলাকে আর কালামের স্বপ্নকে।
ও হ্যাঁ, আমার প্রতিবেশী সে লোকের নাম ছিল কালাম।
ভাই, সেদিন আমি পাহাড়ী-বাঙালী ভেদাভেদ বুঝিনি
সেদিন আমি রক্তে-রক্তে পার্থক্য খুঁজিনি
সেদিন আমি নয়নের জলে সকল ধর্ম ভেসে যেতে দেখেছি
সেদিন আমি মানবতার গান গেয়েছি
পাহড়ের সাধারণ মানুষ ঘৃণার ভাষা বুঝে না
পাহড়ের সাধারণ মানুষ রাজনীতি বুঝে না
শত আঘাত শত কষ্টেও তারা ভালো বাসতে জানে
তারা পাহাড়ের মানুষ তারা পাহাড়ে প্রাণ আনে।
আলোকিত রাঙামাটি