রাঙামাটি । শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ , ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাঙামাটি প্রতিনিধিঃ-

প্রকাশিত: ১৩:১৩, ২৫ মার্চ ২০২০

রাঙামাটিতে থেমে নেই এনজিও গুলোর কিস্তির চাপ, সাধারণ মানুষ দিশেহার

রাঙামাটিতে থেমে নেই এনজিও গুলোর কিস্তির চাপ, সাধারণ মানুষ দিশেহার

রাঙামাটি সদর প্রতিনিধিঃ- বিশ্বের সব কিছুতেই পড়েছে করোনার প্রভাব। তবুও কমছে না ক্ষুদ ঋণ কর্মসূচী এনজিও গুলোর কিস্তির চাপ। এখনো বাড়ী বাড়ী গিয়ে তাদের কিস্তি আদায় চলছে। ঘন্টার পর ঘন্টা ঘুরে ঘুরে কিস্তির জন্য ধন্য দিচ্ছে গ্রাহকদের বাড়ী বাড়ী। যেখানে করোনা প্রভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ হয়ে গেছে। 

গত ১ সপ্তাহ যাবত সারাদিন দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতা নেই, কোন বেচা বিক্রি নেই। কি খাব, কি করে বাঁচব এ নিয়েই যখন দিশেহারা তখন এনজিও গুলো দরজার কড়া নাড়ছে কিস্তির জন্য। এমনিতে এনজিও গুলোর চাপের কারণে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের উপর। ব্যাংক, এনজিওর ও সুদ কারবারিদের দেনার চাপে মানুষ দিশেহারা হয়ে উঠেছে। এমন দূরভোগের দিনে সাধারণ গ্রাহকরা যখন নিজের দুমুটো অন্ন জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে ঋণের কিস্তি কিভাবে দিবে সেটা ভেবে দিশেহারা মানুষ। তারপরও এনজিও কর্মীদের চাপ সইতে হচ্ছে। এনজিও কর্মীদের চাপে অন্যের কাছ থেকে মোটা সুদে টাকা এনে তাদের দিতে হচ্ছে বলে এমনটা জানালেন ভুক্তভোগীরা। 

জেলা প্রশাসকের অনুরোধও মানছে না এনজিও গুলো। এ অবস্থায় দরিদ্র মানুষকে দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচী নয় বরংচ দরিদ্র মানুষকে আরো দরিদ্র করে তুলতে চলছে এনজিওদের কার্যক্রম। 

মঙ্গলবার বিকালে কয়েকজন গ্রাহক তাদের দুর্ভোগের কথা জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। 

এছাড়া রিজার্ভ বাজার এলাকার বাজারের পানের দোকানদার ইলিয়াস জানান, ব্যবসা নেই তারপরও কিস্তির টাকা মাফ নেই। যা বিক্রি করছি তা কিস্তি দিচ্ছি। অন্য দিকে যে দোকানদার দের কাছে দোকানে পন্য ক্রয় করেছি সেই দোকানে দেনা বাড়ছে। সামনে চৈত্র মাস তাদের দেনা কিভাবে শোধ করবো সেটা ভেবে পাচ্ছি না। আবারো কোন এনজিও থেকে মোটা শুধে ঋণ নিয়ে আবারো ঋণ গ্রস্থ হতে হবে এই আরকি।

রিজার্ভ বাজার বাজারের চাম্পানীর মার টিলার শ্রমজীবির স্ত্রী বলেন, স্বামী কাজে যাচ্ছে প্রতিদিন কিন্তু কোথাও তেমন কাজ নেই। করোনা ভাইরাসের কারণে আয়ের হাত সীমিত হয়ে গেছে। যা আই করে তা দিয়ে ছেলে মেয়েদের দুই বেলা জোটে না। সকালে এনজিওর লোক কিস্তির জন্য এসে বাসায় বসে আছে। পরে দেবো বললেও শুনছে না। দিতেই হবে, তাই উপায়ন্ত না হয়ে নিজের এক জোড়া কানের দুল ছিলো সেটা বন্দক দিয়ে এনজিও টাকা পরিশোধ করেছি।

আরো একজন ভুক্তভোগী বলেন, সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সবাই যখন সোচ্চার। সরকার যেখানে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে বহাল তবিয়াতে চলছে এনজিও ও সুদে কারবারিদের কিস্তি আদায়। করোনাভাইরাসের প্রভাবের পর থেকে রাঙামাটিতে নিত্যপ্রয়োজনী পণ্য ছাড়া অন্য সব কিছুর বেচা কেনা এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। তারপর থেমে নেই কর্মীদের কিস্তি আদায়। এই অবস্থা আগামী ৬ মাস এনজিও কার্যক্রম বন্ধ করে জনগণকে বাঁচাতে সরকারের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। রাঙামাটিতে এনজিও ছাড়াও বেশ কয়েকটি সমবায় সমিতি রয়েছে। তারা সাধারণ মানুষকে সমিতির মাধ্যমে চড়া সুধে ঋণ দিচ্ছে। দারিদ্র বিমোচন করতে গিয়ে তারা আরো দরিদ্র হচ্ছে। মোটাতাজা হচ্ছে এনজিও ও সমিতি গুলো। বাজারের প্রতিটি ব্যবসায়ী কমপক্ষে ৪-৬ টি এনজিওর ঋণের জালে জড়িত। তাই বর্তমানে কিস্তির চাপে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সরকারের এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলেও তিনি উল্লেখ করেন। 

একই বাজারের লন্ড্রির দোকানদার ঝন্টু। মানুষের কাপড় লন্ড্রি করেই তার জীবন ও জীবিকা নির্ভর। করোনাভাইরাসের প্রভাবে এখন আর কেউ বাসা থেকে বের হচ্ছে না। তাই লন্ড্রিও করে টাকা উপার্জন করতে পারছে না তিনি। কি খেয়ে বাঁচবেন তা নিয়েই তিনি দিশেহারা। তবুও রয়েছে কিস্তির চাপ। 

আলোকিত রাঙামাটি

সম্পর্কিত বিষয়:

জনপ্রিয়