রোহিঙ্গা বসতি: ৮ হাজার একর বনভূমি উজাড়
অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরিতে ভূমি কাটছেন এক রোহিঙ্গা যুবক
রোহিঙ্গাদের চাপে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের পরিবেশ, বনভূমি ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। রোহিঙ্গা বসতির কারণে গত ৩ বছরে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের অর্থাৎ উখিয়া-টেকনাফের ৮ হাজার ১৬৩ একর বনভূমি উজাড় হয়েছে। এরমধ্যে জ্বালানি চাহিদা মেটাতে ৪ হাজার ২৭ একর সৃজিত বনভূমি ও বসতি স্থাপনে ৪ হাজার ১৩৬ একর প্রাকৃতিক বন উজাড় করা হয়েছে।
পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাকার অংকে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দুই হাজার ৪৫০ কোটি। এরমধ্যে এক হাজার ৮৫৯ কোটি টাকার জীববৈচিত্র্য ও ৫৯১ কোটি টাকার বনজ দ্রব্যের ক্ষতি হয়েছে।
সম্প্রতি উখিয়ার কুতুপালং এলাকা পরিদর্শন করেছে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, রোহিঙ্গা বসতির কারণে বন ও পরিবেশের যে ক্ষতি হয়েছে তা অত্যন্ত ভয়াবহ। ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বনে অবস্থান নেয়ায় বনভূমি উজাড় হচ্ছে।
রোহিঙ্গা বসতির কারণে বালুখালী ঘুমধুম করিডোর দিয়ে বাংলাদেশ-মায়ানমারের মধ্যে হাতি চলাচলের যে রাস্তা ছিল তা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে মানুষ ও হাতির মধ্যে সংঘাত বাড়ছে। এরইমধ্যে ১২ রোহিঙ্গাসহ তিন বছরে ৪২ জন মানুষ হাতির আক্রমণে মারা গেছেন।
কক্সবাজারের বনাঞ্চল হাতির চলাচল, বাস, বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ ন্যাচারের (আইইউসিএন) ২০১৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী এ এলাকায় ৬৩টি হাতি বাস করতো। রোহিঙ্গা বসতির কারণে বনভূমি ও জীববৈচিত্র্যের যে ক্ষতি হয়েছে তা যথাযথভাবে নিরূপণ করতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।
পরিবেশ অধিদফতর জানিয়েছে, ৮ হাজার ১৬৩ একর বনভূমির বাইরে রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারে আর কোনো ভূমি বরাদ্দ না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত বছর রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্ব হলে ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে। রোহিঙ্গারা যাতে কক্সবাজার জেলা বা অন্য কোনো স্থানে ছড়িয়ে পড়তে না পারে এসব বিষয় দেখভাল করবে জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, বিভিন্ন সংস্থা চলাচলের জন্য বনবিভাগের গেজেটভুক্ত জমিতে রাস্তা, ল্যাট্রিন, নলকূপ, গুদামঘর, ওয়ার্ক স্টেশন ইত্যাদি নির্মাণ করেছে। এ পর্যন্ত ৩৪টি ক্যাম্প, ২৯টি সিআইসি অফিস স্থাপন করা হয়েছে। এসব ক্যাম্পে দুই লাখ ১২ হাজার ৬০৭টি অস্থায়ী ঘর, ৯ হাজার ৪৩৭টি নলকূপ, ৫৮ হাজার ৬০টি ল্যাট্রিন, ১৬ হাজার ৯৫৭টি গোসল খানা, ২০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন, ৩৪ দশমিক ৬০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক, ত্রাণ সংরক্ষণের জন্য ২০টি গুদামঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ এখনো অব্যাহত রয়েছে। অপরিকল্পিত রোহিঙ্গা বসতি স্থাপনের ফলে ধ্বংস হয়েছে প্রকৃতি ও পরিবেশ। এর প্রভাবে জলবায়ু পরিবর্তন প্রকট আকার ধারণ করেছে।
তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পসমূহ কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সুরক্ষিত করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের তৎপরতা রয়েছে সেখানে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্ব হওয়ায় ঘুমধুম ও বালুখালী হাতির করিডোরে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেয়ার কাজ এগিয়ে চলছে। এছাড়া দুই বছরে ক্যাম্পের বাইরে নতুন করে ২৯০ হেক্টর বনভূমি সৃজন করা হয়েছে। ক্যাম্পের ভেতরে বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় আপাতত কিছু করা যাচ্ছে না।
আলোকিত রাঙামাটি