রাঙামাটি । শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ , ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১০:০৯, ২৯ অক্টোবর ২০২০

শক্তিশালী সশস্ত্রবাহিনী গড়তে চায় সরকার: প্রধানমন্ত্রী

শক্তিশালী সশস্ত্রবাহিনী গড়তে চায় সরকার: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষায় শক্তিশালী সশস্ত্রবাহিনী গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর সরকার। তবে বাংলাদেশ যুদ্ধ নয়, শান্তি চায় এবং সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রেখেই এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

বুধবার সকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৮টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি কখনো আমরা আক্রান্ত হই সেটা মোকাবিলা করার মতো শক্তি যেন আমরা অর্জন করতে পারি সেভাবেই আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাই এবং সেভাবেই আমরা তৈরি থাকতে চাই।

প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, আবারো বলবো আমরা শান্তি চাই। বন্ধুত্ব চাই। বৈরিতা চাই না, যুদ্ধ চাই না।

যুদ্ধের ভয়াবহ রূপ নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সেই ভুক্তভোগী। কাজেই আর সেই ধ্বংসযজ্ঞে আমরা যুক্ত হতে চাই না, কিন্তু শান্তির পথ বেয়ে আমরা প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে চাই।

যখনই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে তখনই সশস্ত্রবাহিনীর উন্নয়নে তার সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আরো বলেন, আমরা চেয়েছি সশস্ত্রবাহিনীর প্রতিটি সদস্যের জীবনমান উন্নত হোক এবং সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নত হোক। আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।

যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে মাত্র ৯ মাসের মধ্যে জাতির পিতার দিয়ে যাওয়া সংবিধানে দেশের পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত স্পষ্ট। আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে আমরা বাংলাদেশকে আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নত করতে চাই।

সেনা সদস্যদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পবিত্র সংবিধান এবং দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য আপনাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে অভ্যন্তরীণ কিংবা বাহ্যিক যেকোনো হুমকি মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।

শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড বজায় রাখার গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আপনারা সেনাবাহিনীর ভেতরের মূল চালিকা শক্তিগুলো অর্থাৎ ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, কর্তব্য পরায়ণতা, দায়িত্ববোধ এবং সর্বোপরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে আপনাদের স্বীয় কর্তব্য যথাযথভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে যাবেন, সেটাই আমি আশা করি।

সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের প্রতীক। সেভাবেই মানুষের আস্থা অর্জন করেই আপনাদের এগিয়ে যেতে হবে।

সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে দেশের জন্য কাজ করার লক্ষ্যে সর্বপ্রথম ‘পেশাদারিত্ব এবং প্রশিক্ষণ’ প্রয়োজন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পেশাদারিত্বের কাঙ্ক্ষিত মান অর্জনের জন্য আপনাদের সবাই পেশাগতভাবে দক্ষ, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সৎ এবং মঙ্গলময় জীবনের অধিকারী হতে হবে।

মনোমুগ্ধকর কুচকাওয়াজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে সদর দফতর ৭ স্বতন্ত্র এডিএ ব্রিগেড (চট্টগ্রাম), সদর দফতর প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড (সিলেট), সদর দফতর ২৮ পদাতিক ব্রিগেড, ৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি, ৬৬ ইস্ট বেঙ্গল, ৪৩ বীর, ৪০ এসটি ব্যাটালিয়ন এবং ১২ সিগন্যাল ব্যাটালিয়নের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

সেনাপ্রধান, সেনানিবাসের জিওসিসহ ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালিতে দেশের দক্ষিণবঙ্গের এই একমাত্র সেনানিবাসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

পায়রা নদীর তীরে অবস্থিত নয়নাভিরাম সৌন্দর্যমণ্ডিত এই সেনানিবাসটি প্রায় ১৫শ’ ৩২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনী জনগণের, সেনাবাহিনী জনগণের বাহিনী। এদেশের উন্নতি হলে সেনা সদস্যদের পরিবারেরই উন্নতি হবে। সে কথা মাথায় রেখেই সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

পটুয়াখালীর লেবুখালিতে ৭ম পদাতিক ডিভিশনের সদরদফতর প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পদ্মার এ পাড়ে সশস্ত্রবাহিনীর কোনো ব্রিগেড ছিল না যে কারণে আমরা এখানে ৭ পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ ৩টি ব্রিগেড সদর ও ৫টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সমৃদ্ধির পথে আরো এগিয়ে যাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

তিনি বলেন, আমাদের সরকারের সময় সেনাবাহিনীতে অনেক আধুনিক যানবাহন, হেলিকপ্টার, সমরাস্ত্র ও সরঞ্জামাদি সংযোজন করা হয়েছে। এভাবেই দ্রুত ও সমন্বিত আধুনিকায়নের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে বিশ্বের দরবারে একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনীতে রূপান্তরিত করার পদক্ষেপও তার সরকার নিয়েছে এবং এতে সফলকাম হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

একদা বঞ্চিত দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে তার সরকারের পদক্ষেপ হিসেবে লেবুখালি সেনানিবাসের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নবগঠিত সেনানিবাসের উন্নয়ন কাজ পরিকল্পিতভাবে ও দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অভাবনীয় অগ্রগতি ডিভিশনের প্রতিটি সদস্যের ত্যাগ, কঠোর পরিশ্রম ও আন্তরিক প্রচেষ্টার প্রতিফলন হবে, আমি বিশ্বাস করি।

সুদূরপ্রসারী নগর পরিকল্পনার আলোকে প্রাকৃতিক শোভাকে নষ্ট না করে পরিবেশবান্ধব সেনানিবাস গঠনের পরিকল্পনার জন্য তিনি সেনাবাহিনী প্রধান ও এই ডিভিশনের জিওসিসহ সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, এ এলাকায় সেনানিবাস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন প্রাণ সৃষ্টি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী এ সম্পর্কে আরো বলেন, বরিশাল সেনানিবাসের উন্নয়ন এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে নতুন আশা যোগাচ্ছে এবং আপনাদের কাছে তাদের প্রত্যাশা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরইমধ্যে রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন, সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন এবং পদ্মাসেতু প্রকল্পের নিরাপত্তা ও তদারকির জন্য একটি কম্পোজিট ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করেছি। মিঠামইন এলাকায় একটি সেনানিবাস স্থাপনের কাজ চলছে।

দেশের উন্নয়নে ও যেকোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে সশস্ত্রবাহিনীর বিশাল ভূমিকার জন্য সেনাবাহিনীর সদস্যদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

দেশের অবকাঠামো উন্নয়নেও সশস্ত্রবাহিনীর বিশাল ভূমিকার স্বীকৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশেষ করে হাওর অঞ্চলে মিঠামইন-ইটনা-অষ্টগ্রামে সড়ক নির্মাণ কাজ থেকে শুরু করে সব কাজে তারা সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। পদ্মাসেতু ও বঙ্গবন্ধু সেতু সংরক্ষণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাতেও সেনাবাহিনীর বিশাল ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের সীমিত সম্পদের মধ্যেও সশস্ত্রবাহিনীকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে সরকার তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কুমিল্লা, বগুড়া ও সৈয়দপুর সেনানিবাসে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সাভার ও সিলেট সেনানিবাসে একটি করে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়েছে। সিএমএইচগুলোর উন্নয়নের পাশাপাশি পাঁচটি আর্মি মেডিকেল কলেজ এবং ৩টি নার্সিং কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। রামু ও সিলেট সেনানিবাসে পর্যাপ্ত সুবিধা সম্বলিত ২টি সিএমএইচ -এর নির্মাণ কাজ চলছে।

সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সাঁজোয়া এবং আর্টিলারি কোরের জন্য আধুনিক গান ও মিসাইল ক্রয় করা হচ্ছে। পদাতিক বাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক ইনফ্যান্ট্রি গেজেট ক্রয় করা হয়েছে। আমাদের মিলিটারি একাডেমির ভিত্তিটা জাতির পিতা করে গিয়েছিলেন, আজকে তা বিশ্বে প্রথম সারির প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

তিনি বলেন, এটি যে একদিন একটি বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে রূপ নেবে সেটা সে সময় জাতির পিতা তার বক্তৃতাতে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এরমধ্যে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও করোনাভাইরাসের কারণে সেটা কিছুটা স্থবির হয়ে গেছে। তারপরেও আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য সর্বদা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ আমরা সফল হবো।

বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের যে মর্যাদা লাভ করেছে তা ধরে রেখে আরো এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমাদের দেশের চলমান অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে, যাতে করে দেশকে আমরা উন্নত করতে পারি এবং ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নত হবে।

আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে এবং বাংলাদেশ নামক ব-দ্বীপকে রক্ষায় তার সরকার শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এবং আপনাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি সুন্দর জীবন পাবে এবং ভালোভাবে যেন বাঁচতে পারে সেই ব্যবস্থাটাই আমরা করে যাচ্ছি।

দেশের ৯৭ শতাংশ মানুষ এখন বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে এবং মুজিববর্ষে দেশের শতভাগ ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালানোতে তার সরকারের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করে সরকার প্রধান বলেন, দেশের কোনো ঘর আর অন্ধকারে থাকবে না, কেউ গৃহহীন থাকবে না। প্রত্যেকটি মানুষকে আমরা ঘর করে দেব।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশ ও জাতির প্রতি আপনাদের যে দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ এবং দেশমাতৃকার প্রতি ভালবাসা নিয়েই আপনারা স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করবেন, সেটাই আমরা চাই। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে।

করোনাভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভ সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শীতকালে করোনাভাইরাসের আরেকটা ধাক্কা আসতে পারে। তার জন্য সদা প্রস্তুত থেকে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে আপনারা স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করবেন, এটাই আমরা আশা করি।

আলোকিত রাঙামাটি