রাঙামাটি । শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ , ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১১:৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০

শখের পাখিতেই ভাগ্যের পরিবর্তন

শখের পাখিতেই ভাগ্যের পরিবর্তন

পাখির খামারে পাখির পরিচর্যা করছেন সালমা সুলতানা

জামালপুর জেলা সদরের দিগপাইত ইউনিয়নের সুলতান নগর গ্রামের সালমা সুলতানার ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে শখের পাখিতেই। সুলতান নগরের সালমা সুলতানা পেশায় গৃহিণী। স্বামী, শাশুড়ি, মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে তার সংসার।

সালমা সুলতানার স্বামী লোমান রেজা সুলতান ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। কোনো চাকরি না হওয়ায় বেকার জীবন যাপন করছিলেন। অভাব অনটনের সংসারের হাল ধরতে ধার দেনা করে বিদেশে পাড়ি জমান। বিদেশে তিনি আয় উপার্জনে ভালো করতে পারেনি।

এদিকে সালমা সুলতানা শাশুড়ি, এক মেয়ে আর দুই ছেলে নিয়ে খুব কষ্টে খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করতে থাকেন। অভাব অনটনের সংসারে শখের বসে ১০ বছর আগে এইচএসসি পাস করা ওই গৃহবধূ এক জোড়া পাখি আর ২ জোড়া দেশি কবুতর কিনে লালন-পালন শুরু করেন। ওই খামারে এখন ৫০ হাজার টাকারও অধিক মূল্যের কবুতর আর পাখি রয়েছে। এখন সেই শখের পাখি থেকে ৪০ শতাংশ জমির উপর দাঁড়িয়েছে বিশাল কবুতর আর পাখির খামার। সেই খামারের নামকরণ করা হয়েছে ‘সুলতান নগর পাখি ঘর’। এতে রয়েছে ১৫০ জাতের দেশি-বিদেশি ৫১০ জোড়া কবুতর আর বিভিন্ন জাতের ৪০০ জোড়া পাখি। 

ওই খামারে রয়েছে কিং, লাহুরি সিরাজি, বিউটি হুমর, রেসার, তুরীবাজ, বনটিনেট, ফিলবেগ, মুসলদম, কালদম, কাল ঝাঁক, লক্ষ্মা, মুক্ষ্মী, চিলা, কাগজি, সরটিন, বাদ সিরাজ কগা, স্পিনিং গিরিবাজ, গিয়া চুল্লি, বোম্বাই, সিলভার রেসার, সিলভার দম, শেলো, গড়া, লোটন প্রভৃতি জাতের কবুতর আর পাখির মধ্যে কগাটেল, লাভবার্ড, ইলিশ বাজরীগার, ফ্রিন্স, সিলভার জাবা, লোটিনো জাবা, ডাইমন্ড ডাব, স্প্রেনজেল, রেইন ব্লো, ঘুঘু, কাকাতোয়া, টিসিবি, ফেলো, আলবিনো, গ্রেগ্রীন, গোল্ডেন ডাবল ফেক্টর, ভাওলেট প্রভৃতি জাতের পাখি রয়েছে। 

এসব পাখি দেখতে খামারে ভিড় জমান রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর বিভাগীয় ও জেলা শহরের মানুষ। এসব শহরের পাখি ব্যবসায়ীরাও পাখি কিনতে আসেন ওই খামারে। এছাড়া অনলাইনে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে পাখি। এখন শখের পাখিই আজ সালমা সুলতানার সংসার পরিচালনার একমাত্র অবলম্বন। 

১০ বছর আগে ১ জোড়া পাখি আর ২ জোড়া দেশি কবুতর দিয়ে নিরলস পরিশ্রম আর পাখিদের প্রতি ভালোবাসায় তিল তিল করে ওই খামারটি দাঁড় করান সালমা সুলতানা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাখির সেবা যত্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকে পাখি চাষি সালমা সুলতানা। নিজের সন্তানের চেয়েও তিনি বেশি যত্ম করে তার খামারের পাখিদের। তাই তো সালমা সুলতানাকে এলাকার মানুষ পাখির 'মা' বলে ডাকে। তার এ কাজে সহযোগিতা করে তার শাশুড়ি। পাখি চাষি সালমা সুলতানার স্বামী বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসে। দেশে ফিরে পাখি চাষি সালমা সুলতানার স্বামী পাখি চাষ লাভজনক দেখে সেও দেশে থেকে যায়। তিনিও পাখির মা সালমা সুলতানার সঙ্গে পাখি চাষের কাজে লেগে যায়। তাতে তাদের উপার্জন আরো বেড়ে যায়। সংসারে সচ্ছলতা ফিরে আসে। বড় মেয়ের লেখা পড়া, দুই ছেলে আর শাশুড়িসহ তাদের সংসার পরিচালনার খরচ চালাতে আর কষ্ট হয় না। তাদের সংসারে সুখ ফিরে এসেছে। পাখির মা সালমা সুলতানার সংসারের সবাই এখন খুশি।

সালমা সুলতানা বলেন, শখের বসে ১ জোড়া পাখি আর ২ জোড়া দেশি কবুতর লালন পালন শুরু করে ছিলাম। পাখিদের প্রতি ভালোবাসা আর সেবা-যত্মে আজ প্রায় ৪০ শতাংশ জমির ওপর বড় একটি খামার দাঁড়িয়েছে। সেই শখের পাখিতে আমার ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। পাখি চাষ করে উপার্জিত অর্থে আমার সংসারের সচ্ছলতা ফিরে আসে।

সালমা সুলতানার শাশুড়ি বলেন, পাখি চাষ করে উপার্জিত অর্থে আমাদের সংসারে সুখ ফিরে এসেছে। আমার ছেলের বউকে পাখি চাষে সহযোগিতা করে থাকি। এখন পাখির সেবা-যত্ম করতে ভালোই লাগে।

পাখি চাষি লোমান রেজা সুলতান বলেন, পাখি চাষ একটি লাভবান ব্যবসা। কয়েক জোড়া পাখি বা কবুতর পালন করে যে কেউ তার সংসার পরিচালনা করতে পারবে। পাখি চাষের মাধ্যমে দেশের বেকারত্ব কমানো সম্ভব। বেকার মানুষগুলো স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে।

আলোকিত রাঙামাটি