রাঙামাটি । শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ , ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১১:০৮, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

শেখ মুজিবুর রহমানের ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধির ৫১তম বার্ষিকী আজ

শেখ মুজিবুর রহমানের ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধির ৫১তম বার্ষিকী আজ

ছবি:-সংগৃহীত


বাঙালি জাতির জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৬৯ সালের এই দিনে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিয়েছিলেন তৎকালীন পূর্ববঙ্গের লাখ লাখ ছাত্র-জনতা।

এর আগে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আগরতলা মামলা থেকে মুক্তি পান শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি তখন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা রূপে আত্মপ্রকাশ করেন। এমন পরিন্থিতিতে ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের গণসংবর্ধনায় ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে ডাকসুর তৎকালীন সহসভাপতি, কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও বর্তমানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশবাসীর পক্ষ থেকে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধুু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তবে শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রথম বঙ্গবন্ধু উপাধি দেন তখনকার ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক।

কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত এ বিশাল গণসংবর্ধনায় তৎকালীন ডাকসুর সভাপতি তোফায়েল আহমেদ মাইকে ঘোষণা করেন, কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি ঋণের বোঝা হালকা করতে চায়। জাতির পক্ষ থেকে প্রিয় নেতাকে উপাধি দিতে চাই। তখন রেসকোর্স ময়দান প্রকম্পিত হয়ে উঠে। লাখ লাখ জনতা হাত উত্তোলন করে জানান দেন, প্রিয় নেতা শেখ মুজিবকে উপাধি দেওয়া হোক। এরপর তোফায়েল আহমেদ বলেন, এবার বক্তৃতা করবেন আমাদের প্রিয় নেতা ‘বঙ্গবন্ধু’ শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর থেকেই জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে গেলেন বাঙালির প্রিয় ‘বঙ্গবন্ধু’।

ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতির সাবেক সভাপতি মুশতাক চট্টগ্রামেরই সন্তান। আনোয়ারার ভিংরোল গ্রামে তার জন্ম। সেই ঐতিহাসিক সময়ে শেখ মুজিবের বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার স্মৃতিচারণ করে রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক বলেন, ‘১৯৬৭ সালে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ ‘প্রতিধ্বনি’ নামক একটি মাসিক পত্রিকা বের করত। সে পত্রিকার একটি সংখ্যায় আমি ‘সারথী’ ছদ্মনামে ‘আজবদেশ’ শীর্ষক একটি নিবন্ধ লিখি। লেখাটার শেষ দিকে ‘বঙ্গশার্দূল’ শেখ মুজিবের পাশে প্রথম ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি ব্যবহার করি।’

বলাবাহুল্য, তখন থেকেই শেখ মুজিরের নামের সাথে এতদিনের প্রচলিত ‘মুজিব ভাই’, ‘বঙ্গশার্দূল’, ‘সিংহশার্দূল’ ইত্যাদি বিশেষণকে রীতিমতো প্লাবিত করে ‘বঙ্গবন্ধু’ নামটিই সমুজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ‘বঙ্গবন্ধু’ নামটি পরবর্তীকালে তার নামের সাথে এমন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ে, ‘বঙ্গবন্ধু’ উচ্চারণ করলে আর শেখ মুজিব বলতে হয় না। একইভাবে শেখ মুজিব নাম উচ্চারিত হলেই ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিটিও চলে আসে অবলীলায়। আজ শেখ মুজিব মানে ‘বঙ্গবন্ধু’, ‘বঙ্গবন্ধু’ মানেই শেখ মুজিব।

সম্প্রতি তৎকালীন ডাকসুর সভাপতি ও শেখ মুজিবের একনিষ্ঠ সহচর তোফায়েল আহমেদ বলেন, আগরতলা মামলায় বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামি করে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছিল। তখন জাগ্রত ছাত্র-সমাজ সর্বদলীয় ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। সংগ্রাম পরিষদে ডাকসু’র ভিপি হিসেবে সমন্বয়ক ও মুখপাত্রের দ্বায়িত্ব পালন করি। আর তাই রেসকোর্সের ঐতিহাসিক সমাবেশের আমি ছিলাম সভাপতি।

তিনি বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি পল্টনে লাখ লোকের সমাবেশে বক্তব্যে সেদিন আমি বলেছিলাম, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে হবে। ঠিক তার পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি স্বৈরশাসক বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। তার পরেরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি সেই ঐতিহাসিক ১০ লাখ লোকের বিশাল সমাবেশে জাতির জনককে বঙ্গবন্ধু উপাধি ঘোষণা করি।

স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবকে দেওয়া বঙ্গবন্ধু উপাধি ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগসহ রাষ্ট্রীয়ভাবে নানান ঐতিহাসিক দলিলে স্থায়ীভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়। কেন-না, বঙ্গবন্ধুর নামেই লক্ষ-কোটি বাঙালি, বাংলাদেশের মানুষ নিজের জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো।

আলোকিত রাঙামাটি

জনপ্রিয়