রাঙামাটি । শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ , ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১৫:৩২, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯

সর্বাধুনিক উড়োজাহাজ নিয়ে বাড়ছে বিমানের সক্ষমতা

সর্বাধুনিক উড়োজাহাজ নিয়ে বাড়ছে বিমানের সক্ষমতা

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কথা শুনলেই এক সময় চোখে ভেসে উঠত মানহীন একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানের ছবি। সেই দৈন্যদশা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্বের বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিমানে যুক্ত হচ্ছে একের পর এক সর্বাধুনিক প্রযুক্তির উড়োজাহাজ। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সেবার মানকে আরো আধুনিক করার পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটি।

২০১১ থেকে ২০১৪- এই তিন বছরে লম্বা দূরত্ব পাড়ি দিতে সক্ষম চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ যুক্ত হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে। পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে যুক্ত হয় আরো ছয়টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এবং চারটি বোয়িং ৭৮৭ ‘ড্রিমলাইনার’ উড়োজাহাজ। সর্বশেষ চলতি মাসের ২১ ডিসেম্বর ‘সোনার তরী’ ও ২৪ ডিসেম্বর ‘অচিন পাখি’ নামে যুক্ত হলো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বোয়িং ৭৮৭-৯ সিরিজের নতুন দুটি ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এসব উড়োজাহাজ বিমানের বহর বড় করার পাশাপাশি সংস্থাটির সক্ষমতাও বাড়িয়েছে।

১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের যাত্রা শুরু হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এটি প্রতিষ্ঠা করেন। ডাকোটা উড়োজাহাজ দিয়ে বিমানের যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার নিয়ে আকাশে উড়ছে বিমান।

বর্তমানে বিমানের বহরে উড়োজাহাজ রয়েছে ১৮টি। এগুলোর মধ্যে বোয়িং থেকে সরাসরি কেনা নিজস্ব উড়োজাহাজই ১২টি। যার চারটি ৭৭৭-৩০০ ইআর, দুটি ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ এবং চারটি ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ। দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯ সিরিজের ড্রিমলাইনার। আর লিজে আনা ছয়টি উড়োজাহাজের মধ্যে চারটি ৭৩৭-৮০০ ও দুটি ড্যাশ-৮কিউ৪০০ উড়োজাহাজ রয়েছে।

নতুন দুই ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার বিমানবহরে যুক্ত হওয়ার পর বর্তমানে বিমানের উড়োজাহাজ সংখ্যা ১৮টি। এছাড়া আগামী বছর কানাডা থেকে কেনা তিনটি ড্যাশ-৮ দেশে আসছে। সে সময় উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়াবে ২১টিতে। সর্বাধুনিক এসব উড়োজাহাজ যুক্ত হওয়ায় সক্ষমতা বাড়ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের। নতুন যুক্ত হওয়া বোয়িং ৭৮৭-৯ মডেলের একটি উড়োজাহাজ ৩০০ যাত্রী পরিবহন করতে পারে। টানা ১৪ হাজার কিলোমিটার উড়তে সক্ষম এ উড়োজাহাজের দৈর্ঘ্য ২০৬ ফুট।

সূত্র জানায়, একটি বোয়িং ৭৮৭-৯ উড়োজাহাজের বর্তমান মূল্য ২৯২ দশমিক ৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার বা দুই হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে দুটি ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৯ উড়োজাহাজের দাম চার হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের জটিলতায় চীনের হেইনান এয়ারলাইন্সের অর্ডার বাতিলের সুফল কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ড্রিমলাইনার দুটি বর্তমান বাজারমূল্যের অর্ধেক দামে কিনেছে।

২০০৮ সালে বোয়িং ও বিমানের মধ্যে ২১০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যে ১০টি নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি করে বর্তমান সরকার। বোয়িংয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নতুন জাহাজ সংগ্রহের দিনক্ষণ এগিয়ে আনা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বহরে যুক্ত হয়েছে পালকি, অরুণ আলো, আকাশপ্রদীপ, রাঙ্গাপ্রভাত, মেঘদূত, ময়ূরপঙ্খি, সোনার তরী ও অচিন পাখি নামে বিমানগুলো। বিশালাকারের এসব অত্যাধুনিক উড়োজাহাজগুলোকে বলা যায় আকাশের বিস্ময়।

২০১১ সালে বিমানে প্রথম বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ যুক্ত হওয়ার আগে বিমান বহরে মোট ৮টি উড়োজাহাজের গড় বয়স ছিল ২০ বছরের বেশি। নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত করার পর থেকে অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। বর্তমানে লিজে সংগৃহীত উড়োজাহাজের বয়স ৭ বছরেরও কম। আর বিমানের নিজস্ব ৮টি উড়োজাহাজের গড় বয়স ৩ বছরের মতো।

বহরের পরিবর্তনের সঙ্গে বিমানের বাণিজ্যিক পট-পরিবর্তনও হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে বিমান পরপর তিন বছর ৬০৬ কোটি টাকা মুনাফা করে। এর মধ্যে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪৭ কোটি, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৩৫ কোটি টাকা এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩২৪ কোটি টাকা নিট মুনাফা অর্জন করে বিমান। এর পাশাপাশি গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরেও বিমানের লাভ হয়েছে ২৭২ কোটি টাকা। নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজ সংযোজনের পর থেকে ক্রমে যাত্রীসেবার মান উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটি। ফলে প্রতিযোগিতাপূর্ণ এভিয়েশন বাণিজ্যে যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিমানের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের তথ্যমতে, বিগত ৪৭ বছরে পৌনে ৬ কোটির বেশি যাত্রী পরিবহন করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেকর্ড সংখ্যক ২৬ লাখ যাত্রী বহন করে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৮ লাখ ৫৩ হাজার যাত্রী বহন করে বিমান। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৩ লাখ ৫১ হাজার এবং এর আগের বছর ২৩ লাখ ১৮ হাজার যাত্রী বহন করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন, বর্তমানে বিমানের বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ দিয়ে পূর্ণ সক্ষমতায় ফ্লাইট চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এর অন্যতম কারণ বহরে পর্যাপ্ত ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ না থাকা। বিমান অভ্যন্তরীণ সব রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বহরের দুটি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ দিয়ে অভ্যন্তরীণ এত ফ্লাইট চালানো সম্ভব না হওয়ায় ঢাকা থেকে সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটের ফ্লাইটগুলো বোয়িং উড়োজাহাজ দিয়ে পরিচালনা করতে হচ্ছে। এতে উড়োজাহাজের ফ্লাইং আওয়ার কমে যাচ্ছে। বহরে নতুন ড্যাশ-৮ যুক্ত হলে ৭৩৭ উড়োজাহাজ দিয়ে কলম্বো, মালে ও চেন্নাই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। তখন আর এ সমস্যা থাকবে না।

যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধির ব্যাপারে কোনো আপস নেই মন্তব্য করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী বলেন, রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা হিসেবে বিমানের ভাবমূর্তির সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তি জড়িত। বিমানে ভ্রমণ করা দেশি-বিদেশি প্রত্যেক যাত্রী আমাদের সম্মানিত অতিথি। আমাদের অতিথিদের সেবায় যাতে কোনো ধরনের ক্রটি না থাকে যেদিকে আমরা সর্বোচ্চ লক্ষ্য রাখছি।

বিমানে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এরই মধ্যে বিমানবহরে সর্বাধুনিক উড়োজাহাজ যুক্ত হয়েছে। ২০২০ সালের মার্চ-জুনের মধ্যে যুক্ত হবে তিনটি নতুন ড্যাশ-৮কিউ৪০০ উড়োজাহাজ। সম্প্রসারিত বহর দিয়ে চলমান রুটগুলোয় ফ্লাইটের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি ২০২০ সালে ম্যানচেস্টার, নারিতা, কলম্বো, মালে ও নিউইয়র্কে ফ্লাইট পরিচালনার প্রস্তুতি রয়েছে।

আলোকিত রাঙামাটি

সর্বশেষ