রাঙামাটি । বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ , ৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ১২:১৮, ১৫ এপ্রিল ২০২১

কাপ্তাইয়ে পাহাড়ে আগুনঃ

হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

মোঃ নজরুল ইসলাম লাভলু, কাপ্তাইঃ- চৈত্রের খরতাপে কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন পাহাড়ে কে বা কারা প্রতিদিন আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে।আবার পাহাড়ে বিভিন্ন প্রকার, সবজি, ফল এবং ধান চাষ করার জন্যও আগুন দিচ্ছে পাহাড়ে। এভাবে আগুন লাগানোর ফলে পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

গেলো সপ্তাহে কাপ্তাইয়ের শীলছড়ি আনসার ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ে কে বা কারা আগুন দেয়। খবর পেয়ে কাপ্তাই ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নেভায়। এছাড়া চিৎমরম, রাইখালী এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে কোন না কোনদিনই আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করছে সবুজ বনাঞ্চল ও পাহাড়ের সৌন্দর্যকে।

উপজেলার শীলছড়ি এলাকায় বসবাসরত ও ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মাহাবুব আলম জানান, কে বা কারা সবুজ পাহাড়ে আগুন দিচ্ছে তা জানি না, তবে এ আগুনের শিখায় পুড়ছে বনের পশু,পাখি ও সবুজ গাছ গাছালি। নষ্ট হচ্ছে মাটির টপ সয়েল। 
চৈত্র-বৈশাখ মাস এলেই প্রচন্ড খরতাপে গাছের পাতা শুকিয়ে নিচে ঝরে পড়ে স্তুপ হয়ে যায়। এক শ্রেণীর লোক ইচ্ছায়-অনিচ্ছাই বনের পাতার এসব স্তুপের মধ্যে আগুন ধরিয়ে দেয় বা সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ বনের মধ্যে ফেলে দিয়ে মজা পায়। অপর এক শ্রেণীর মানুষ জুম চাষের জন্য প্রতি বছর বনের মধ্যে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিভিন্ন কারনে পার্বত্যাঞ্চলের সংরক্ষিত বনের মধ্যে আগুন ও ঝুম চাষের ফলে পার্বত্যাঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির পশু,পাখি আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। এতে করে পশু-পাখির অবাসস্থল ধ্বংস ও প্রাণী জগৎ পার্বত্যাঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হতে চলছে। পাশাপাশি,অনেক ছোট-বড় সবুজ বনাঞ্চল পুড়ে পশু খাদ্য বাগান ধ্বংস হচ্ছে। পাহাড়ে পাহাড়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ফলে নষ্ট হচ্ছে মাটির টপ সয়েল। ফলে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধনসহ বনের পশু লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। ফলে প্রায় জানমালের ক্ষতিসাধনের ঘটনা ঘটছে বলে মত প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদরা।   

কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কের সিএমসির সভাপতি কাজী মাকসুদুর রহমান বাবুল জানান, এক শ্রেণীর অসাধু লোকজন অহেতুক পাহাড়ে আগুন দিয়ে ঝুম চাষ করছে, ফলে পাহাড়ের বন ধ্বংস হচ্ছে, পাশাপাশি পশু,পাখি বিলুপ্ত হতে চলছে। হুমকির মুখে পড়েছে পার্বত্যঞ্চলের বন্যপ্রাণী। এখনো প্রতিদিন বনের হাতি বনে খাদ্য না পেয়ে লোকালয়ে এসে মানুষের বাসা-বাড়িতে হামলা করছে খাদ্য সংকটের ফলে। তিনি এধরনের কর্মকান্ড যারা করছে তাদের প্রতি প্রচন্ড ক্ষোভ  প্রকাশ করেন এবং পাহাড়ে আগুন ও ঝুম চাষ বন্ধ করার আহবান জানান।

কাপ্তাই কর্ণফুলী সরকারি কলেজের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোঃ আজিম উদ্দীন জানান,পাহাড়ে আগুন লাগানোর ফলে পরিবেশে কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে একদিকে যেমন পরিবেশ রাসায়নিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে অনেক প্রজাতির জীবজন্তু হারিয়ে যাচ্ছে। এতে করে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ রফিকুজ্জামান শাহ্‌ জানান, বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন বনভূমি বা পাহাড়ে কেউ আগুন দেওয়ার অপচেষ্টা করলে তাৎক্ষণিক ভাবে তা প্রতিহত করা হয়। মূলত জুম চাষীগন পাহাড়ে জুম চাষ করার জন্য আগুন দিচ্ছে।

তিনি জানান, আগুন দেওয়ার ফলে পাহাড়ের উপরিভাগের মাটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।মাটিতে যে সমস্ত উপকারী অণুজীব রয়েছে, সেগুলো ধ্বংস হচ্ছে। বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হয়। প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছপালা গুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভূমির উর্বরতা ক্ষয় সাধিত হয়। ফলে ভ্মিধসের সৃষ্টি হয় এবং বন্যপ্রাণীর খাবার সংকট দেখা দেয়,এতে বন্যপ্রাণী লোকালয়ে এসে হামলা চালায়। 

স্থানীয় জনগণ এবং পরিবেশবাদীরা এর বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। না হলে অচিরেই সবুজ পাহাড় মরুভূমিতে পরিনত হবে বলে মন্তব্য করেন তারা।

আলোকিত রাঙামাটি