রাঙামাটি । শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ , ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১০:২৫, ৬ জুন ২০২০

২০০০ বছর পূর্বে মৃত্যু, আজো তার মুখমণ্ডলে দাড়ি ও চুল অবিকৃত!

২০০০ বছর পূর্বে মৃত্যু, আজো তার মুখমণ্ডলে দাড়ি ও চুল অবিকৃত!

ছবি: সল্টম্যান


মমির কথা শুনলে প্রথমেই প্রাচীন মিশরের ফারাওদের মমি এবং পরিমিডের কথা মনে হয়। হাজারো বছর অতিবাহিত হলেও মমি এখনো রহস্য হিসেবেই রয়ে গিয়েছে।

সবারই ধারণা, মানুষই হয়ত বা মানুষকে মমি হিসেবে তৈরি করে। তবে জানেন কি? প্রাকৃতিকভাবেও অনেক মানুষ মৃত্যুর পর মমিতে পরিণত হয়েছে। 

ইরানের প্রাচীন লবণ খনি থেকে আবিষ্কৃত দেহাবশেষ তেমনই একটি প্রাকৃতিক মমি। যা সল্টম্যান হিসেবেই পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে সল্টম্যান হলো প্রাকৃতিক মমি যা ইরানের চেহারাবাদ লবণ খনি থেকে আবিষ্কৃত হয়েছিল। লবণ খনিটি ইরানের রাজধানী তেহরানের ৩৪০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে জাঞ্জান প্রদেশে অবস্থিত। 

 

সল্টম্যানের মাথা সংরক্ষিত রয়েছে

 

মমিতে পরিণত হওয়া মানুষগুলো লবণ খনিতে মৃত্যুবরণ করে। প্রাকৃতিকভাবে লবণ দ্বারা তদের দেহাবশেষ সংরক্ষিত হয়েছিল। কয়েক বছর ধরে অনুসন্ধান করে মোট ছয়টি সল্টম্যানের সন্ধান মিলেছে এই খনি থেকে। দেহাবশেষগুলো প্রাচীন আছেমেনিড এবং সাসানিয়ান যুগসহ কয়েকটি ভিন্নযুগের অন্তর্গত।

১৯৯৪ সালে চেহরাবাদের খনি থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লবণ উত্তলনের সময় প্রথম সল্টম্যানের সন্ধান পাওয়া যায়। মমিকৃত দেহাবশেষের সঙ্গে লোহার ছুরি এবং স্বর্ণের কানের দুলসহ বেশ কয়েকটি নিদর্শনও পাওয়া যায়। সল্টম্যানের লম্বা সাদা চুল এবং দাড়ি ছিল।

বর্তমানে তার মাথা তেহরানে অবস্থিত ইরানের জাতীয় জাদুঘরে একটি কাঁচের বক্সে সংরক্ষিত আছে। ধারণা করা হয়, প্রাকৃতিকভাবে মমিকৃত সল্টম্যান সাসানীয় সাম্রাজ্যের সময়ে প্রায় ১৭০০ বছর পূর্বে জীবিত ছিলেন। তার বয়স ছিল ৩৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। 

 

লবণ খনি থেকে প্রাপ্ত  মৃতদেহের অংশ

 

১৯৯৪ সালে প্রথম সল্টম্যান আবিষ্কৃত হওয়ার পর স্থনটিতে আরো অনুসন্ধান চালানো হয়। ২০০৪ সালে সল্টম্যানদের দেহাবশেষ সন্ধান করতে খনন অভিযান পরিচালনা করা হয়। ২০০৫ সালে এবং ২০০৭ সালে প্রাপ্ত পাঁচটিসহ মোট ছয়টি দেহাবশেষ পাওয়া যায়। 

প্রত্নতত্ত্ববিদরা ধারণা করেন, খনিতে ঘটা কোনো দুর্ঘটনার ফলেই তাদের প্রাণ যায়। সল্টম্যানদের মধ্যে প্রাপ্ত প্রথমটি ইরানের জাতীয় জাদুঘরে রাখা হয়েছে। পরবর্তী চারটি জাঞ্জান প্রত্নতত্ত্ব জাদুঘরে সংরক্ষিত হয়েছে এবং শেষটি প্রত্নতাত্ত্বিক সাইটটিতেই সংরক্ষিত আছে। 

সল্টম্যান হিসেবে পরিচিত প্রাকৃতিকভাবে মমিকৃত দেহাবশেষগুলো আবিষ্কৃত হওয়ার পর প্রত্নতত্ত্ববিদরা এই প্রাচীন লবণ খনি শ্রমিকদের সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পেরেছেন। খনিটি নিয়েও অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব, প্রত্নতাত্ত্বিক বিজ্ঞান, আইসোটোপ বিশ্লেষণ, খনি বিষয়ক প্রত্নতত্ত্ব এবং শারীরিক নৃবিজ্ঞান ক্ষেত্রগুলোতে গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। 

 

সল্টম্যানের বাম পা

 

এই গবেষণাগুলো থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদরা প্রাচীন খনি খনন পদ্ধতি জানতে পেরেছেন। খনন যন্ত্র এবং পরিবেশগত বিষয় সম্পর্কেও জানা যায়। খনি খনন পদ্ধতির ধরণ অনুযায়ী প্রত্নতত্ত্ববিদরা আছেমেনিড, সাসানিয়ান এবং ইসলামিক নামে তিনটি পৃথক পর্বে ভাগ করেছেন।

কাল পর্বে একেক খনন পদ্ধতি অনুসরণ করা হত। সাসানীয় আমলে অঞ্চলিক শ্রমিকরা খনিতে কাজ করত এবং সরবরাহও করা হত আঞ্চলিক ভিত্তিতে। আছেমেনিড সাম্রাজ্যের সময় এই অঞ্চলের খনিগুলোতে বিদেশি শ্রমিকরা কাজ করত। 

 

খনি থেকে প্রাপ্ত অন্যান্য মৃতদেহের অঙ্গসমূহ

 

ছয়টি সল্টম্যান দেহাবশেষ প্রাপ্তির তথ্য স্বীকৃত হলেও আরো বেশি মানুষের দেহাবশেষ ছিল বলে জানা যায়। মমিগুলোর দেহের খণ্ড খণ্ড অঙ্গগুলো পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞরা জনাতে পেরেছেন প্রকৃতপক্ষে সল্টম্যানদের সংখ্যা আট কিংবা আরো বেশি। লবণ খনির মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে দেহাবশেষগুলো প্রায় দুই হাজার বছর সংরক্ষিত অবস্থায় থাকলেও বায়ুর তাপমাত্রা এবং চাপের পরিবর্তনের ফলে অনেক স্থানে ফাটল ধরেছে। 

যে কারণে জীবাণু এবং পোকামাকড় প্রবেশ করে দেহাবশেষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সল্টম্যানদের মমিগুলো আবিষ্কৃত হওয়ার পর যথাযথভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে এগুলো স্থায়ীভাবে কাঁচের বক্সের মধ্যে রাখা হয়েছে। 

সূত্র: অ্যানসাইন্টঅরিজিন

আলোকিত রাঙামাটি

জনপ্রিয়